এক অর্বাচীন বালক ঘন্টাখানেক ধরে একটিমাত্র বাক্য মুখস্ত করছে, ‘সম্রাট বাবর পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন।’
তার এক আঙ্কেল ভাতিজার ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বাচা তাদের দিয়ে আর কতক্ষণ যুদ্ধ করাবি, মেলা সৈন্য মেরে ফেলেছিস। যুদ্ধটা এখন থামিয়ে দে। তা ছাড়া, আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এত জায়গা থাকতে তারা পানিতেই বা যুদ্ধ করতে গেল কেন?”
যেমন চাচা, তেমন ভাতিজা।
এভাবে ২৪ ঘন্টা পড়লেও প্রকৃত জ্ঞানের ভান্ডার শূন্যই থেকে যাবে, উদ্যম ও কল্পনা শক্তি শুকিয়ে যেতে থাকবে। মুখস্ত বিদ্যার জোরে স্কুল কলেজ থেকে সার্টিফিকেট জোগাড় করে গাড্ডালিকা প্রবাহে সাদামাটা চাকরি বাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করে বাকি জীবন উৎসর্গ করে মূল্যবান জীবনের সমাপ্তির টানার সম্ভাবনাই বেশি।
একান্ত মেধার ঘাটতি না হলে বাড়িতে প্রতিদিন তিন-চার ঘন্টা পড়াই যথেষ্ট। কবিতা এবং সমীকরণ ও ফর্মুলা ছাড়া অন্য কিছু মুখস্ত করবে না। শিক্ষক গবেট না হলে যা শেখার তা ক্লাস রুমেই শেখা হয়ে যায়। পশ্চিমা শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত দেশগুলিতে অনেক ক্ষেত্রে বই পত্র স্কুলেই রেখে দেয়া হয়।
পরীক্ষার হলে পাশের পরীক্ষার্থীর খাতা দেখে নকল করা, এবং অপরের রচিত বইয়ের ভাষা মুখস্ত করে তা হুবহু খাতায় উগরে আসা একই কথা। পার্থক্যটা শুধু এই, প্রথমটা অপরাধ, শাস্তি হিসেবে বহিষ্কার জরিমানা হতে পারে। দ্বিতীয়টা নির্বুদ্ধিতা, টেনেটুনে পাশের গ্লানি। দুদিন যেতে না যেতে পঠিত বিষয় স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যায়। চাকরি বাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে দিতে জান কাবার।
পরীক্ষকরা মুখস্ত বিদ্যার অনুসারীদের একই উত্তর বারবার দেখে একবার চোখ বুলিয়ে বিরক্ত হয়ে গড়পরতা নম্বর দিয়েই ক্ষান্ত হন। নিজের ভাষায় লেখা ব্যতিক্রমী উত্তর দেখলে তারা উদারতার মনোভাব নিয়ে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেন।
পঠিত বিষয় কয়েকবার পড়ে তার মূল বিষয়টি ভালো করে বুঝে অন্তরে ধারণ করবে। তারপর নিজের ভাষায় লিখে অভ্যাস করবে। সারা জীবন মনে থাকবে।
পাঠ্য বই ছাড়া পছন্দসই বাংলা ইংরেজি নাটক, নভেল, ম্যাগাজিন পড়ে জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করার চেষ্টা করবে। গতানুগতিক পাঠ্য পুস্তকের বাইরে বিশাল জগত ও প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জ্ঞানের আসল উৎস।
স্কুল ও পাঠ্যপুস্তক ছাড়া খেলাধুলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আগামী দিনের সংগ্রাম মুখর দিনগুলো মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রায় ৪০০ বছর আগের একটা প্রবাদ…All work and no play makes Jack a dull boy”.