গল্পে-প্রবন্ধে পড়েছি ব্রিটিশ আমলে অল-হোয়াইট ব্রিটিশ ক্লাবের বাইরে লেখা থাকতো natives and dogs are not allowed. নেটিভ এবং কুত্তাদের প্রবেশ নিষেধ।
সে নেটিভদের একজন, ঋষি সোনাক, খোদ সাদা চামড়া অধ্যুষিত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদ লাভের জন্য একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। রূপকথা নয় কি?
তাহলে, আর একটা রূপকথা শোনা যাক। ইন্টারনেট থেকে ধার করা রূপকথা, বাস্তবতাকে হার মানানো রূপকথা।
বোম্বাই থেকে ব্যাঙ্গালোর অভিমুখে ট্রেনটি ধেয়ে চলেছে। কামরায় টিকেট চেকার উঠে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে লক্ষ্য করলেন একটা কিশোরী সিটের নিচে লুকিয়ে আছে। চেকারের শ্যেণ দৃষ্টি বলে কথা। তিনি বালিকাটিকে টেনে বের করে এনে বললেন, টিকেট দাও।
মেয়েটি ভয়ে কুঁকড়ে আমতা আমতা করে বললো, টিকেট নেই। টাকা পয়সাও নেই।
চেকার তাকে বলল, ট্রেন থেকে নেমে যাও। তা না হলে .….
হঠাৎ পিছন থেকে এক মহিলার আওয়াজ শোনা গেল, টিকিটের দাম আমি দিয়ে দিব।
মহিলার নাম শ্রীমতি উষা ভট্টাচার্য। একজন কলেজ শিক্ষিকা।
উষা দেবী টিকিটের দাম চুকিয়ে মেয়েটিকে বললেন, তুমি আমার কাছে এসে বসো। মেয়েটি পাশে বসলে মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলেন, কি নাম তোমার?
–আমার নাম চিত্রা।
–তুমি কোথায় যাবে?
–আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
–তা’হলে, তুমি আমার সাথে এসো।
ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে শ্রীমতী উষা একটি এনজিওতে চিত্রাকে দেখাশোনার ব্যবস্থা করে দিলেন।
কিছুদিন পর শ্রীমতি ভট্টাচার্য দিল্লিতে বদলি হয়ে গেলেন। দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
তারপর দিল্লির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। প্রায় ২০ বছর পরে শ্রীমতি ঊষা ভট্টাচার্য আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর এক কলেজের আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিতে গিয়েছেন।
সেখানে তিনি একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন। ভোজন পর্ব শেষ হলে ওয়েটারকে বিল দিতে বললে সে জানালো, আপনাদের বিল আগেই পরিশোধ করা হয়ে গেছে।
ঊষা দেবী পিছন ফিরে দেখলেন, এক মহিলা ও তার স্বামী তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা আমার বিল কেন দিতে গেলেন?
চিত্রা বললেন, আপনি বোম্বে থেকে বাঙ্গালোর যাত্রায় আমার যে ট্রেন ভাড়া দিয়েছিলেন সে তুলনায় এ বিলের অংক অতি নগণ্য।
ও সেই তুমি, চিত্রা?
ঠিকই ধরেছেন, তবে আমার নাম চিত্রা নয়, আমি এখন সুধা মূর্তি, ইনি আমার স্বামী নারায়ণ মূর্তি।
তারপর যা হয়, দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বহুবন্ধনে অনেকক্ষণ যাবৎ আবদ্ধ করে রাখলেন। উভয়ের কন্ঠরুদ্ধ, চোখে বাস্পের আভাস।
মোটেই রূপকথা নয়। সুধা মূর্তি বিখ্যাত ইনফোসিস কোম্পানির চেয়ারম্যান, এবং নারায়ণ মূর্তি মাল্টিমিডিয়ান ডলার ইনফোসিস সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।
হ্যাঁ,আমরা একটু সাহায্য করলে অন্যদের জীবন উজ্জ্বলতায় ভরে উঠতে পারে। সামর্থে কুলোলে কারো বিপদের সময় হাত বাড়িয়ে দিতে যেন দ্বিধা না করি।
আমার গল্প ফুরোলো কিন্তু এখনও নটে গাছটি মুড়ানোর সময় হয়নি। এ দম্পতির মেয়ের নাম অক্সতা মূর্তি (Akshata Murthy)। তার স্বামীর নাম ঋষি সোনাক যার কথা দিয়ে এ কাহিনী শুরু করেছিলাম। তাদের পরবর্তী সম্ভাব্য গন্তব্য লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট।
(ইন্টারনেট থেকে পরিবর্তিত ভাষান্তর।)
