October 29, 2025

রাণী এলিজাবেথ অবশেষে ৯৬ বছরে দীর্ঘ ৭০ বছর সিংহাসন আগলে রেখে অনন্ত কালের দিকে যাত্রা করেছেন।

ভাবতে অবাক লাগে, অনেক যুগ আগে ১৯২৬ সালে জন্মলগ্নে এলিজাবেথের রাজ সিংহাসনে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। দু’টো অভাবিত কান্ড ঘটিয়ে ভাগ্য তাঁকে রাণীর পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ এনে দেয়।

প্রথম কান্ড ঘটান তার বড় চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড। রাজমুকুট ‌ মাথায় তোলার আগে থেকেই যুবরাজ এডওয়ার্ড ওয়ালিস সিম্পসন নামে আমেরিকার এক বিবাহিতা রমণীর‌ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। ওয়ালিস সিম্পসন তখন প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় স্বামীর ঘর করছেন।
১৯৩৬ সালে পিতা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর এডওয়ার্ড সিংহাসনে আসীন হওয়ার পর সিম্পসন তাঁর দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিলে তিনি সিম্পসনকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রাজ পরিবারের ট্র্যাডিশন ভঙ্গ করে দু’বার তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে শাসনতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পরিবার এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে আপত্তি ওঠে। প্রধানমন্ত্রী বল্ডুইন‌ ক্যাবিনেট সদস্যসহ পদত্যাগের হুমকি দেন।

এ পর্যায়ে রাজা এডওয়ার্ড এক অভাবনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রাজ্য ত্যাগ করে ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। সিংহাসন ত্যাগ করে তার কাঙ্ক্ষিত রমণীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাকি জীবন ফ্রান্সে কাটিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এডওয়ার্ড রাজার পদে আসীন থাকলে‌ পরবর্তী রাজা হিসেবে তার সন্তান এবং নাতি নাতনিরা সিরিয়ালে প্রথমে থাকতেন। ভ্রাতা ষষ্ঠ জর্জ এবং এলিজাবেথের সিংহাসন লাভের সম্ভাবনা ছিল সুদূর পরাহত।

১৯৩৬ সালে কয়েক মাস রাজ্য শাসনের পর সম্রাট অষ্টম এডওয়ার্ড রাজ্য ত্যাগ করলে রাজ সিংহাসনের অধিষ্ঠিত হন ষষ্ঠ জর্জ।

রাজা ষষ্ঠ জর্জের স্বাস্থ্য মোটেই ভালো যাচ্ছিল না। অতিরিক্ত ধূমপানে আসক্তির কারণে ফুসফুসে টিউমার বাসা বাঁধে। অপারেশন করে তার বাম পাশের ফুসফুস সবটাই কেটে ফেলা হয়। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নিদ্রিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ‌

রানীর পিতা যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন রাজকুমারী এলিজাবেথ রাষ্ট্রীয় সফরে তার স্বামীর সাথে কেনিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

সে ঘটনাবহুল রাতে তারা ন্যাশনাল পার্কে একটা গাছের উপরে কুটিরে বসে ‌সিংহ হাতি, গন্ডার, জিরাফ, জেব্রার চলাচল দর্শন করছিলেন। শ্বাপদ-সংকুল গহীন অরণ্যে বিপদ-আপদের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ বিশ্বনন্দিত শিকারি জিম করবেটকে তাদের সঙ্গে পাঠান। করবেট ভারতে বাঘ শিকারি হিসেবে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

পিতার মৃত্যুর খবর বিবিসি রেডিওর মাধ্যমে সারা দুনিয়া জানলেও খবরটা এলিজাবেথের কাছে পৌঁছে পরদিন দুপুরবেল। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত হয়নি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে এলিজাবেথ ডিম ভাজা এবং বেকন সহকারে ব্রেকফাস্ট করেন। সেখান থেকে গাড়িতে তাঁরা কেনিয়ার জনগণের উপহার দেয়া একটা লজে যান। লজে পৌঁছে রাজার মৃত্যু সংবাদ পান।
রাণী এলিজাবেথ কাল বিলম্ব না করে প্লেনে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

ইতোমধ্যে, জিম করবেট লজের ভিজিটরস বইতে লিখেন,”মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন তরুণী গাছে উঠেন রাজকুমারী হিসেবে এবং নেমে আসেন রাণী হিসেবে।”

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest