গল্পে-প্রবন্ধে পড়েছি ব্রিটিশ আমলে অল-হোয়াইট ব্রিটিশ ক্লাবের বাইরে লেখা থাকতো natives and dogs are not allowed. নেটিভ এবং কুত্তাদের প্রবেশ নিষেধ।
সে নেটিভদের একজন, ঋষি সুনাক, খোদ সাদা চামড়া অধ্যুষিত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। রূপকথা নয় কি?
ঋষির বাসস্থান লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। তিনশত বৎসর পুরনো, একশোটি কক্ষ। এ ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে ছিলেন উইনস্টন চার্চিল, ডেভিড লয়েড, ক্লিমেন্ট এটলি, মার্গারেট থ্যাচার। এ ভবনে বসে তারা পুরো পৃথিবী শাসন করতেন। তারা দাবি করত, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেতে সাহস পায় না।
ব্রিটিশ লেখক কিপলিং লিখেছেন কলোনির অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী শ্বেতাঙ্গদের একটা বোঝা। সে বর্বর মানব গোষ্ঠীকে সভ্য করার মহান দায়িত্ব তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন।‌

উইনস্টন চার্চিল নিশ্চয়ই তার কবরে শুয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চিন্তা করছেন, একি কান্ড! যাদের আমি দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে বাংলার ৩০ লাখ লোক মেরে বলেছিলাম, তারা তো মরবেই, তারা শুধু খরগোশের মত বাচ্চা পয়দা করতে পারে। তাদের সাহায্য করে কোন লাভ হবে না। Famine or no famine, Indians will always breed like rabbits.” ভাগ্য ভালো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার পার্টি ইলেকশনে হেরে যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে ভারত সহজে স্বাধীন হতে পারত না।
তাহলে, আর একটা রূপকথা শোনা যাক। ইন্টারনেট থেকে ধার করা রূপকথা, বাস্তবতাকে হার মানানো রূপকথা। দুটো রূপকথার মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হয়েছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা যেতে পারে।

বোম্বাই থেকে ব্যাঙ্গালোর অভিমুখে ট্রেনটি ধেয়ে চলেছে। কামরায় টিকেট চেকার উঠে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে লক্ষ্য করলেন একটা কিশোরী সিটের নিচে লুকিয়ে আছে। চেকারের শ্যেণ দৃষ্টি বলে কথা। তিনি বালিকাটিকে টেনে বের করে এনে বললেন, টিকেট দাও।
মেয়েটি ভয়ে কুঁকড়ে আমতা আমতা করে বললো, টিকেট নেই। টাকা পয়সাও নেই।

চেকার তাকে বলল, ট্রেন থেকে নেমে যাও। তা না হলে .….
হঠাৎ পিছন থেকে এক মহিলার আওয়াজ শোনা গেল, টিকিটের দাম আমি দিয়ে দিব।
মহিলার নাম শ্রীমতি উষা ভট্টাচার্য। একজন কলেজ শিক্ষিকা।
উষা দেবী টিকিটের দাম চুকিয়ে মেয়েটিকে বললেন, তুমি আমার কাছে এসে বসো। মেয়েটি পাশে বসলে মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলেন, কি নাম তোমার?
–আমার নাম চিত্রা।
–তুমি কোথায় যাবে?
–আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
–তা’হলে, তুমি আমার সাথে এসো।

ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে শ্রীমতী উষা‌ একটি এনজিওতে চিত্রাকে দেখাশোনার ব্যবস্থা করে দিলেন। ‌

কিছুদিন পর শ্রীমতি ভট্টাচার্য দিল্লিতে বদলি হয়ে গেলেন। দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

তারপর দিল্লির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। প্রায় ২০ বছর পরে শ্রীমতি ঊষা ভট্টাচার্য আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর এক কলেজের আমন্ত্রণে বক্তৃতা দিতে গিয়েছেন।
সেখানে তিনি একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন। ‌ ভোজন পর্ব শেষ হলে‌ ওয়েটারকে বিল দিতে বললে সে জানালো, আপনাদের বিল আগেই পরিশোধ করা হয়ে গেছে। ‌

ঊষা দেবী পিছন ফিরে দেখলেন, এক মহিলা ও তার স্বামী তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছেন। ‌ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা আমার বিল কেন দিতে গেলেন?
চিত্রা বললেন, আপনি বোম্বে থেকে বাঙ্গালোর যাত্রায় আমার যে ট্রেন ভাড়া দিয়েছিলেন সে তুলনায় এ বিলের অংক অতি নগণ্য।

ও সেই তুমি, চিত্রা?
ঠিকই ধরেছেন, তবে আমার নাম চিত্রা নয়, আমি এখন সুধা মূর্তি, ইনি আমার স্বামী নারায়ণ মূর্তি।
তারপর যা হয়, দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বহুবন্ধনে অনেকক্ষণ যাবৎ আবদ্ধ করে রাখলেন। উভয়ের ‌কন্ঠরুদ্ধ, চোখে বাস্পের আভাস।

মোটেই রূপকথা নয়। সুধা মূর্তি বিখ্যাত ইনফোসিস কোম্পানির চেয়ারম্যান, এবং নারায়ণ মূর্তি মাল্টিমিডিয়ান ডলার ইনফোসিস সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।

হ্যাঁ,আমরা একটু সাহায্য করলে অন্যদের জীবন উজ্জ্বলতায় ভরে উঠতে পারে। সামর্থে কুলোলে কারো বিপদের সময় হাত বাড়িয়ে দিতে যেন দ্বিধা না করি।
আমার গল্প ফুরোলো কিন্তু এখনও নটে গাছটি মুড়ানো বাকি রয়েছে। এ দম্পতির মেয়ের নাম অক্সতা মূর্তি (Akshata Murthy)। তার স্বামীর নাম ঋষি সুনাক যার কথা দিয়ে এ কাহিনী শুরু করেছিলাম।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest