শব্দটা শুনলেই প্রথমেই মনে আসে ডাকসাইটে নেতার নাম যার ডাক শুনে সবাই সাইটে ছুটে আসে। ‌ অর্থাৎ প্রতাপশালী লোক। শব্দটির অর্থ তাই বলতে পারেন প্রতাপশালী। শুধুই প্রতাপশালী নয়, দুর্দান্ত প্রতাপশালী।

ব্রিটিশ আমলে ছিল ডাকসাইটে জমিদার। তাদের দাপট ছিল আলাদা; এমনকি তাদের প্রভু ব্রিটিশদের থেকেও বেশি। তাদের অত্যাচারের কাহিনী নাটক নভেলে ইনিয়ে বিনিয়ে লেখা হয়েছে। তারা প্রাসাদ সাজাতো ইংল্যান্ড থেকে ঝাড়বাতি এনে। লখনৌ থেকে বাইজি নিয়ে আসতো আমোদ প্রমোদের জন্য।‌ তাদের প্রাসাদের পাশ দিয়ে কেউ ছাতা মাথায় কিংবা জুতা পরে চলাফেরা করতে পারত না।

মুড়াপাড়া ডাকসাইটে জমিদারের প্রাসাদ

পাকিস্তানি আমলে শোনা যেত ডাকসাইটে কিছু কিছু সিএসপি কর্মকর্তাদের নাম। যে সরকারই আসুক না কেন তাদের দাপট ছিল অপরিসীম। ‌ পাকিস্তানের একজন নামকরা বিচারপতি জাস্টিস কর্নেলিয়াস তাদের আখ্যা দিয়েছিলেন প্রশাসনের লৌহকাঠামো—steel frame of administration. এখন দিন পাল্টেছে। ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতাদের দাপটে ‌ কেউ তেমন ডাকসাইটে কর্মকর্তা হতে পারছে না। ‌

এখন দেখা মেলে ডাকসাইটে লেখক, ডাকসাইটে খেলোয়াড়, ডাকসাইটে অভিনেতা এমনকি ডাকসাইটে সুন্দরী। আহামরি কোন গুনে হয়ত গুনান্বিত নন কিন্তু ভক্তদের কল্যাণে নামের সাথে ডাকসাইটে খেতাব জুড়ে দেয়। ইলেকশনের সময় ভক্তরা স্লোগান দেয় …..আমার নেতা তোমার নেতা অমুক ভাই, অমুক ভাই। ব্যস, কালক্রমে পাতি নেতা ডাকসাইটে নেতায় পরিণত হন।

মূল শব্দ ‘ডাকসিদ্ধ’‌ যাকে বলা যায় আজ্ঞাবহ দাস সময়ের পরিসরে দাস থেকে কি করে‌ প্রতাপশালী হয়ে দাঁড়াল ‌‌‌‌তা কে জানে? তবে, ডাকসাইটে কারো কথা শুনলে প্রতাপের পাশাপাশি তার নেতিবাচক দিকটাও মনের দোরে উঁকি মারে।

উইনস্টন চার্চিল কি ডাকসাইটে নেতা ছিলেন?

শুরুতেই যার ছবি দিয়েছি সে চার্চিল ডাকসাইটে নেতা ছিলেন সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ নাই। তবে তার অনেক গুলো কুকীর্তি ব্রিটিশ আমেরিকান ঐতিহাসিকরা ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিয়েছে।

এ সব কুকীর্তির মধ্যে অন্যতম ছিল তার পলিসির কারণে ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলার মানব রচিত দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ লক্ষ, কোন কোন হিসাব মতে ৭০ লক্ষ, লোক প্রাণ হারায়। ‌‌

ভারতের বিখ্যাত কলামিস্ট শশী থারুর কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে চার্চিলকে মুক্তি ও গণতন্ত্রের বরপুত্র হিসেবে অভিহিত করা হলেও তার হাতে ছিল অনেক রক্ত। তিনি আরো বলেন, লোকজন মারা যাচ্ছে আর চার্চিল বললেন এ তাদেরই দোষ কারণ তারা খরগোশ এর মতই জন্ম দিতে থাকে। ভারতের প্রতি তার যে অপরিসীম ঘৃণা ছিল সেকথাও শশী থারুর উল্লেখ করেন।

“People started dying and Churchill said well it’s all their fault anyway for breeding like rabbits. He said ‘I hate the Indians. They are a beastly people with a beastly religion’.” অন্য একটা লেখায় দেখলাম চার্চিল বলেছিলেন ভারতে যদি দুর্ভিক্ষ হয়ে থাকে তাহলে গান্ধী এখনও কি করে বেঁচে আছে?

‘জার্মানিবাসী বাঙালি মধুশ্রী মুখার্জি প্রায় ৭ বছর ধরে অজানা অনেক নথিপত্র ঘেঁটে একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘চার্চিলস সিক্রেট ওয়ার’ বা ‘চার্চিলের গোপন যুদ্ধ’৷ তাঁর দাবি, চার্চিল নিজে সরাসরি বাংলার মন্বন্তরের জন্য দায়ী ছিলেন৷ বাংলায় ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর হাজার আবেদন সত্ত্বেও তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেই কাজ করতে দেন নি৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও চার্চিল ও তাঁর মন্ত্রীরা সেই অনুমতি দেন নি৷

ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার ব্যাপারেও তার ছিল ঘোরতর অনীহা। সৌভাগ্যক্রমে যুদ্ধ পরবর্তী নির্বাচনে তার দল হেরে যাওয়ার ফলে সে আশা পূর্ণ হয়নি। ‌

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest