মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তিম লগ্নে যে কয়টি রাজবংশ পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন, তাদের মধ্যে কুষাণ সাম্রাজ্যের কনিষ্ক ছিলেন উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তিনি শকাব্দ সন প্রবর্তন করেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে, বিশেষ করে চীন দেশে, মহামতি বুদ্ধের পরেই সবচেয়ে বড় অবদান রেখে গেছেন।
ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীর কুষাণদের আদি বাসভূমি মধ্য এশিয়া। সেখান থেকে তারা বর্তমান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান সাম্রাজ্য স্থাপন করে প্রথম শতাব্দীতে উত্তর ভারতের বেনারস পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন। রাজধানী পুষ্পপুরা (বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ার), তক্ষশীলা (বর্তমান পাকিস্তানে) এবং মথুরা। তাদের ভাষা গ্রিক ব্যাকট্রিয়ান ও সংস্কৃত।
বিশাল কুষাণ সাম্রাজ্য
কনিষ্কের জন্ম ৭৮ খ্রিস্টাব্দে রাজত্বকাল আনুমানিক ১২০ থেকে ১৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
সম্রাট কনিষ্কের রাজ দরবারে ছিলেন এক ঝাঁক উজ্জল পন্ডিত ও গুণী ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ছিলেন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের জনক চরক এবং অশ্বঘোষ, বসুমিত্র, নাগার্জুন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তার দরবারে কিছুদিন কাটিয়ে গিয়েছেন। গ্রিক শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত মৌর্য এবং কুশান উভয় রীতির সাথে ভারতের মথুরা স্টাইলের শিল্পকলার রীতির মেলবন্ধন করে কনিষ্ক শিল্পকলার ক্ষেত্রে এক নতুন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেন।
কুষাণ সম্রাট কনিষ্ক ও তার প্রচলিত স্বর্ণমুদ্রা
মূর্তিতে মুন্ডু না থাকলেও কনিষ্ক দেখতে কেমন ছিলেন তা তাঁর অন্য একটা মূর্তি এবং স্বর্ণমুদ্রায় খচিত মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবি থেকে জানা যায়। তাই তার স্টাচুতে মুন্ডু না থাকলে কি বা আসে যায়? তবে মহা প্রতাপশালী কনিষ্ক বলে কথা। স্ট্যাচু থেকে মাথা কি হলো তা নিয়ে কথা উঠবে না তা কি করে হয়?
তার মুন্ডুহীন প্রতিমূর্তি ১৯১১ সালে মথুরার কাছে এক গ্রামে পন্ডিত রাধাকৃষ্ণ আবিষ্কার করেন। ব্যস, দলে দলে শিল্পবোদ্ধারা স্টাচুটির বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করলেন। মজার ব্যাপার, প্রথম দিকে কনিষ্কের হারানো মাথা নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামান নি। পায়ের বুট এবং গায়ের কোট নিয়ে যত গবেষণা চলল।
এক পন্ডিত চেহারা-সুরত দেখে রায় দিলেন কনিষ্ক অত্যন্ত সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। মথুরার গরম আবহাওয়ায় কনিষ্কের ভারী বুট এবং মোটা জাব্বা জোব্বা দেখে একজন ইউরোপীয়ান পন্ডিত মহাফাঁপরে পড়ে গেলেন। শেষমেষ সিদ্ধান্ত টানলেন, কনিষ্ক পোশাকটি তার জন্মভূমি থেকে আনিয়েছিলেন এবং আচার-অনুষ্ঠানে পরতেন। তিনি পোশাকের সেলাই ও কারুকার্যে সম্রাট কনিষ্কের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ছাপ দেখতে পেলেন।
তাই বলে হারানো মাথা নিয়ে কারো যে মাথা ব্যাথা থাকবে না তা নয়। একজন পন্ডিত রায় দিলেন সম্ভবত পরবর্তী শাসকরা মাথাটা কেটে ফেলেছেন। অন্য পণ্ডিতরা সে দাবি নাকচ করে বললেন, তাঁর দেহটা অক্ষত রেখে শুধু মাথার উপর কেন এত আক্রোশ?

সম্রাট কনিষ্কের অন্য একটা স্ট্যাচু
দিন গড়ায়, ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতেরা নানা ধরনের তথ্য হাজির করেন। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও সে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন।
