ইতিহাস এবং প্রচলিত ধারণা মোতাবেক বাংলার শেষ নবাব, নাটকের ভাষায়…. ‘বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি নবাব সিরাজউদ্দৌলা।’ পলাশী যুদ্ধে পরাজয়ের পরও নানা ধরনের নবাবের দেখা মিলে।
নবাব সিরাজদৌলার পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতের পুতুল হিসেবে মীরজাফর নবাব হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় মীর জাফর ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে ইংরেজদের মোকাবেলা করার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশরা ডাচদের পরাজিত করে মীর জাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে মীর কাসিমকে ক্ষমতায় বসায়। তিনি ১৭৬০ সাল থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত বাংলার নবাব ছিলেন।
মির কাসিম পরবর্তিতে ইংরেজদের সাথে সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। বক্সারের যুদ্ধে তিনি ইংরেজ বাহিনীর হাতে পরাজিত হন। বলা হয়ে থাকে এই যুদ্ধই ছিল বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার সর্বশেষ সুযোগ। মীর কাসিম প্রকৃতপক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়েই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। মীরজাফরের মত তার নিজেদের লোকজন কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কিন্তু উন্নত রণকৌশল ও ধূর্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে পেরে ওঠেন নাই। ইংরেজরা তখন সারা বিশ্বে দাপট দেখিয়ে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে। বেচারা মীর কাসিম তাদের সাথে পারবে কি করে? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিজস্ব সেনার পাশাপাশি এদেশের অনেক ভাড়াটিqয়া সেনারাও ইংরেজদের সহায়তা করে। মীর কাশেমকে প্রকৃত অর্থে শেষ নবাব হিসেবে বললে অত্যুক্তি হবে না। তারপরে যারা এসেছে তারা কেউ পাতি নবাব, কেউবা নামমাত্র নবাব।
মীরজাফরের এক বংশধর ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল ছিলেন। তাকেও পাতি নবাব বলা যায়। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ডামা ডোলে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জা প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খানের সাথে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচিত সংসদীয় সরকারকে উৎখাত করে সামরিক আইন জারি করেন। তিনি জেনারেল আয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি বেশিদিন টিকতে পারেন নাই। মির্জার পূর্বপুরুষ মীরজাফরের মত মাত্র তিন সপ্তাহ পরে আইয়ুব খান তাকে বিদায় করে দেন। তিনি লন্ডনে গিয়ে এক হোটেলে ম্যানেজারি করেন। বিশ্বাসঘাতকরা আসলে শেষ রক্ষা করতে পারে না। সোনার বাংলায় জিয়া, মোস্তাক, এরশাদ একই ভাগ্য বরণ করেন।
ইংরেজরাও সুদীর্ঘ রাজত্বকালে তাদের আজ্ঞাবহ অনেককে জমিদার, রায় বাহাদুর, খান বাহাদুর, রাজা, মহারাজা ও নবাব পদে অধিষ্ঠিত করে তাদের সহায়তায় চিরস্থায়ীভাবে এ দেশে জেকে বসার আয়োজন পাক করে বসে ছিল। বারসিক হিটলার তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাদের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা মজবুত করে। ১৮৫৭ সালে কাশ্মীর থেকে আগত চর্ম ব্যবসায়িরা ইংরেজদের সহযোগিতা করলে পুরস্কার স্বরূপ তাদের ঢাকার নবাব হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। সে নবাবরা নিজেদের রাজপ্রাসাদ বানিয়ে, প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে ধন-দৌলত বানিয়ে মহা ধুমধাম করে প্রকৃত নবাবদের মতোই দিনযাপন করতেন। আমরা এবং বিদেশি পর্যটকরা তাদের বিলাসবহুল মঞ্জিল দেখতে ভিড় জমাই।
বাংলা এবং ভারতের অন্যান্য অনেক জায়গায়ও সেসব ইংরেজদের আজ্ঞাবহ পাতি নবাবের দাপট ছিল।
এখন নতুন বাংলাদেশেও হাজার হাজার নবাবের উদ্ভব হয়েছে। নানাভাবে ফন্দি ফিকির করে দেশে বিদেশে প্রাসাদ গড়ে নবাবি হালচালে দিন কাটাচ্ছেন। ঢাকায় অনেক রেস্টুরেন্ট এখন নাম রেখেছে ‘নবাবী খানার রেস্টুরেন্ট’।
নাম বদলেছে কিন্তু, নবাব এবং নবাবী শেষ হয়নি। ইতিহাস বলে, কোনদিন শেষ হবে না।