October 29, 2025

প্রথম যুদ্ধে ইউরোপের উপনিবেশিক শক্তিগুলোর পালের হাওয়া চুপসে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের পালের হাওয়া এবং মাস্তুলও ভেঙ্গে যায়।

ইউরোপে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের মত উপনিবেশিক শক্তি নিজেরাই হিটলারের ঝটিকা আক্রমনের শিকার হয়ে জার্মানির কবল থেকে মুক্তির জন্য ছটফট করছিল। তাদের অর্থবল, জনবল এবং মনোবলও, কল কারখানা, অবকাঠামো ভেঙ্গে চুরমার।

এ সুযোগে কলোনিগুলো স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। নিজেদের নড়বড়ে শক্তি নিয়ে কলোনিগুলো দাবিয়ে রাখার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলে। এদিকে যুদ্ধ পরবর্তী শক্তিশালী হয়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দও কলোনিগুলোকে ছেড়ে দিতে চাপ দিতে থাকে।

দুটো বিশ্বযুদ্ধে অনেকগুলো সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। প্রথম যুদ্ধের পর পতন হয় ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সাম্রাজ্য সে দেশে বিপ্লবের কারণে। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অন্য যে তিনটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পতন হয়। সেগুলো অটোম্যান, অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরি এবং জার্মান সাম্রাজ্য।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইউরোপীয়দের সাম্রাজ্যের উপনিবেশগুলো একে একে হাতছাড়া হতে থাকে।

১৯৪৫ সালে জাপানের থেকে কোরিয়া স্বাধীন হয়। ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনকে স্বাধীনতা প্রদান করে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেন ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়। তার অল্প পরেই বর্মা, শ্রীলংকা এবং মালয়েশিয়া থেকে ব্রিটিশ গুটিয়ে নেয়।

ব্রিটেন ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন, ১৯৫৬ সালে মিশর, ১৯৫০ সালে এবং ১৯৬০ দশকে আফ্রিকার কলোনিগুলোকে স্বাধীনতা প্রদান করে।

আশির দশক নাগাদ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং আশ্রিত রাষ্ট্রগুলোকে মুক্ত করে। ১৯৯৭ সালে হংকং থেকে গুটিয়ে নেয়। যে গ্রেট বৃটেনে‌ সূর্যাস্ত হতো না বলে মনে করা হতো, তাদের শেষ ঠিকানা হয় নিজস্ব দ্বীপ রাজ্যে। এখন দিন কাটছে আমেরিকার লেজুড়বৃত্তি করে।

বৃটেনের অধিকৃত কলোনি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নেদারল্যান্ড বিদায় নেয় ইন্দোনেশিয়া থেকে, হো চি মিনের নেতৃত্বে ইন্দো চায়না জাপানের হাত থেকে মুক্ত হয় তবে স্বাধীনতা যুদ্ধ আরো স্থায়ী হয়।

আফ্রিকা থেকে যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ইতালি হারায় ইথিওপিয়া, লিবিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া।

ফ্রান্স তার আশ্রিত আফ্রিকা মহাদেশে মরক্কো এবং তিউনিশিয়াকে স্বাধীনতা দেয়। তবে দীর্ঘ আট বছর সংগ্রামের পর তাদের কলোনি আলজেরিয়া ফ্রান্সের কবল থেকে মুক্ত হয়। ১৯৬০ সাল নাগাদ ফ্রান্স আফ্রিকার কলোনিরগুলোও মুক্ত করে দেয়।

ফ্রান্সের অধিকৃত আফ্রিকান কলোনি

১৯৬০ সালে রক্তক্ষয়ী রায়টের পর এদের প্রচুর সম্পদের উৎস বেলজিয়াম কঙ্গো থেকে বিদায় নেয়।

বেলজিয়াম অধিকৃত বেলজিয়ান কঙ্গো

পর্তুগিজরা তাদের আফ্রিকার কলোনিগুলো সহজে ছাড়েনি। ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে অভ্যুত্থানের পরে সে কলোনিগুলোকে মুক্ত করে দেয়।

আফ্রিকায় পর্তুগিজ কলোনি

১৯৫৬ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে স্পেন উত্তর মরক্কো, স্পানিশ গিনি এবং সাহারা অঞ্চল ছেড়ে যায়।

স্পেনের হাত থেকে মুক্ত দেশগুলো

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest