October 30, 2025

আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর শহর ইতালির রাজধানী রোম। সাত পাহাড় বিস্তৃত রোম নগরকে একটা জাদুঘর বললে অত্যুক্তি হয় না। শহরটি রোমান সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে, শিল্পকর্ম ও স্থাপত্য শিল্পের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোমান সম্রাটরা কয়েক’শ বছর ধরে তিল তিল করে রাজধানীকে তিলোত্তমা করে করে তুলেছেন। এ জন্য বলা হয় এবং এক দিনে নির্মাণ করা হয়নি—-Rome was not built in a day.

নগরীর যেদিকেই পা বাড়ান না কে,ন হঠাৎ ইতিহাসের পাতা থেকে মনোমুগ্ধকর শিল্পসম্ভার জীবন্ত হয়ে ওঠে অতীতের দিনের গুঞ্জন শুনতে পাবেন।

কলোসিয়াম

৭২ থেকে ৮০ আশী খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আট বছরে নির্মিত রোমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অ্যম্থিপিয়েটারটি ৫০,০০০ দর্শক সংকুলান করতে পারে। এটা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্ট্যান্ডিং থিয়েটার। এখানে পৌরানিক কাহিনীভিত্তিক নাটক, গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর পুনরূপায়ণ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান গ্লাডিয়েটরদের দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আয়োজন করা হতো। গ্লাডিয়েটর যোদ্ধারা জোড়ায় জোড়ায় মরণপণ লড়াই করে রোমান সম্রাট ও অভিজাত শ্রেণীর মনোরঞ্জন করতেন। পরাজিত প্রতিপক্ষের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়ার আগে বিজয়ী গ্লাডিয়েটর‌ সম্রাটের দিকে তাকালে তিনি ফেসবুকের ডাউনভোটের মত বৃদ্ধাঙ্গুল নিম্নমুখী করে অনুমোদন দিতেন। এ থিয়েটার বহু গ্লাডিয়েটরের নিষ্ঠুর মৃত্যুর সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। থিয়েটারটির কিছু অংশ ভূমিকম্প ধ্বসে গিয়েছিল।

পান্থেয়ন মন্দির

প্রাচীন রোমের স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রাচীন রোমের দেব-দেবীর স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে পান্থেয়ন মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরটির সে যুগে নির্মিত ব্রোঞ্জের মূল দরজা এখনো শোভা পাচ্ছে। এখানে ইটালির প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং শিল্পী রাফায়েলের সমাধি রয়েছে।

ট্রেভি ফাউন্টেন

এ ফোয়ারাটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বহু মানুষ এখানে ভিড় জমায় ভাগ্য পরীক্ষার জন্য। এখানে মুদ্রা ছুড়ে দিলে নাকি মনের আশা পূর্ণ হয়।

লা বোক্কা ডেল্লা ভেরিতা

শান্তা মারিয়া মন্দিরের বাইরে এর ইংরেজি নাম the mouth of truth বা সত্যের মুখমণ্ডল। কিংবদন্তি রয়েছে যে কোন মিথ্যাবাদী তার মুখের ভেতর হাত ঢুকালে কামড়িয়ে হাত কেটে ফেলে।‌ রোমান হলিডে সিনেমায় নায়ক মার্লোন ব্র্যান্ডো অড্রে হেপবার্নকে চমকে দেওয়ার জন্য এর মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে মিছেমিছি চিৎকার করার দৃশ্যটা সবার মনে থাকার কথা।

টাইবার নদীর উপর সেতু

টাইবার নদীর সেতু

মধ্যযুগের রেনেসাঁ বা ইউরোপে নবজাগরণের সময় ইতালিতে বিখ্যাত সব শিল্পীদের চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল। তাদের একজন বার্নিনি। রোম নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাইবার নদীর উপর ব্রিজে ১২টি ডানা বিশিষ্ট স্বর্গীয় দূত বা ডানা বিশিষ্ট পরীর ভাস্কর্য দিয়ে সেতুটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। সেতুটির উপর থেকে রোম শহরের অপূর্ব সৌন্দর্য ও সে সাথে শিল্পীর তৈরি শিল্পকলা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।

পৃথিবীর চার নদীর জলধারার ফোয়ারা

১৬৫১ সালে শিল্পী লোরেঞ্জো বার্নিনীর ডিজাইন করা চার মহাদেশের চার নদীর প্রতীকি জলধারা প্রবাহিত করে তৈরি ফোয়ারাটি দর্শকদের মন কাড়ে। ফোয়ারাটি চারটি প্রস্তরখন্ডের‌ উপরে চার জন নদীর দেবীর প্রতিকৃতি রয়েছে। মিশরের নীলনদ, ইউরোপের দানিয়ুব নদী, এশিয়ার গঙ্গা নদী এবং আমেরিকার লিও দা লিটি প্লাটা নদী ফোয়ারাটিতে রূপক হিসাবে দেখানো হয়েছে

সম্রাট নিরোর স্বর্ণালী প্রাসাদ

সম্রাট নিরোর প্রাসাদটি ৬৪ সালে রোমের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সম্রাট ৬৪ সাল থেকে ৬৮ নাগাদ স্বর্ণ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। কিংবদন্তি রয়েছে রোম যখন আগুনে পড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। আসলে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন কিনা সন্দেহ আছে কিন্তু সেই সুযোগে তিনি প্রায় ২০০ একর জমি দখল করে প্রাসাদটি গড়ে তুলেন।

অ্যম্পিথিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে সম্রাট নিরোর প্রাসাদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে কল্পনায় ২০০০ বছর আগে বিচরণ করেছিলাম। হঠাৎ, প্রিয় বাংলা ভাষা শুনে বর্তমানে ফিরে এলাম।

“আসসালামু আলাইকুম স্যার, কিছু লাগবে কি?” ভাষায় নোয়াখালীর টান। বাঙালি ফেরিওয়ালা, তার ডালায় সাজানো কিছু মনোহারী পণ্য। আবারো প্রমাণ হলো নোয়াখালীর লোকজন পৃথিবীর সব খানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

ইটালিতে প্রচুর নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের প্রবাসীরা কাজ করেন। তাঁর সাথে কিছুক্ষণ আলাপ হলো। একটা গলাবন্ধ পছন্দ হলে কিনতে চাইলাম। কিন্তু কিছুতেই দাম নিবেন না। এবার প্রমাণ হলো, বিদেশে বাঙালি মাত্রই সজ্জন, নোয়াখালী হোক কিংবা নওগাঁ।

ছবি: গুগলের সৌজন্যে 

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest