মায়া সভ্যতা
সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ
অবস্থান: বর্তমান মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভেদর, বেলিজ
প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মধ্য আমেরিকায় হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, এল সালভেদরের উত্তরাংশ ও সেন্ট্রাল মেক্সিকো জুড়ে প্রাচীন পৃথিবীর অবিশ্বাস্য রকমের সমৃদ্ধ মায়া সভ্যতা প্রস্ফুটিত হয়ে কালক্রমে বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়। পুরাতত্ত্ববিদেরা হিসেব করে বলেছেন সভ্যতার রমরমা অবস্থা জনসংখ্যা পৌঁছে যায় এক কোটিতে।
মায়ানরা সভ্যতার পথে যাতায়াত শুরু করার প্রায় এক হাজার বছর পরে চীন সভ্যতার পথে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করেছে, পরাক্রমশালী পারস্য ও রোমানদের সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেতে আরও দুই হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। শিল্প বিপ্লবের আগে পশ্চিম ইউরোপকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো বহু যুগ।
যখন মিশর, মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু অববাহিকায় গুটিকয়েক প্রাচীন সভ্যতার বাইরে মানুষ জানত না কীভাবে আবাস গড়তে হয়, সে সময়ে মায়ানরা গড়ে তুলেছিল উঁচু উঁচু স্থাপনা, সমৃদ্ধ করেছে লোক জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগত। উদ্ভাবন করেছিল এমন অনেক কিছু, যা ঐ সময়ের তো বটেই, বর্তমান মানুষদের কাছেও বিস্ময়ের ব্যাপার।
দুনিয়ার রীতি, সাম্রাজ্য সভ্যতা ধীর লয়ে শুরু হয়, এক সময় সমৃদ্ধির মধ্য গগনে পৌঁছে যায়, তারপর শুরু হয় পতন।
মায়া সভ্যতাও উন্নতির মধ্যগগনে পৌঁছে এক সময় বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। পুরাতত্ত্ববিদেরা মায়ানদের রেখে যাওয়া স্থাপনা, পুঁথি পত্র ও অন্যান্য আলামত বিচার-বিশ্লেষণ করে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তাদের অবিশ্বাস্য সমৃদ্ধির কথা শুনিয়ে দুনিয়ার মানুষকে চমকে দেন।
মায়ানদের প্রাচীন শহর ইউকাতান থেকে বাঙ্গালীদের অতি পরিচিত মায়া শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। ইউকাতান ছিল মায়ান সাম্রাজ্যের শেষ রাজধানী খ্রিষ্টপূর্ব (২০০০-২৫০ খ্রিষ্টাব্দ)। এ সভ্যতা টিকেছিল প্রায় ২৫০০ বছর। প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে বর্তমান ইংল্যান্ডের দ্বিগুণ জায়গা জুড়ে মায়া মায়া
মায়া সভ্যতার সুদীর্ঘ সাড়ে চার হাজার বছর স্থায়ী কালকে তিনটি যুগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। (১) প্রি-ক্লাসিক যুগ (২) ক্লাসিক যুগ, ও (৩) পোস্ট ক্লাসিক যুগ
কোডেক্স
মায়ানরা স্বরধ্বনি ভিত্তিক বর্ণমালা তৈরি টেকনিক রপ্ত করতে পারেনি তবে লেখার জন্য গাছের ছাল বাকল দিয়ে তৈরি করতে শিখেছিল কাগজ তা এখনকার ভাষায় বলে কোডেক্স। চিত্রকর্ম মাধ্যমেই তারা লেখাজোকা কাজটা সেরে করত, অনেকটা চীনাদের মত। কর্ডেক্স লেখা কিছু বইপত্র এখনো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
পোশাক-আশাক
তখনকার লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পশুর চামড়া ও পশম দিয়ে তৈরি কাপড়চোপড় পরতো। গ্রীষ্মকালে পুরুষেরা খালি গায়ে থাকলেও শীতকালে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কম্বল দিয়ে তৈরি পোশাক পরতো। মেয়েদের মত ছেলেরা লম্বা চুল রাখতো। বিবাহিত মেয়েরা শরীরে উল্কি লাগিয়ে নো ভ্যাকান্সি নোটিশ টানিয়ে দিত। ভুট্টা দিয়ে তৈরি খাদ্য তাদের প্রধানত প্রোটিনের যোগান দিত।
মায়ানদের পোশাক
তারা মূলত জন্তু জানোয়ারের চামড়া ও পশম থেকে পোশাক তৈরি করত। গ্রীষ্মকালে মায়ান পুরুষরা খালি গায়ে থাকলেও শীতকালে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই কম্বল দিয়ে তৈরি পঞ্চ জাতীয় পোশাক পরিধান করত। মায়ানদের পোশাক অনেকটা আজটেক সভ্যতার মানুষদের পোশাকের মতন ছিলো। বিবাহিত মায়নরা নিজেদের গায়ে উল্কি এঁকে রাখত বিবাহের চিহ্নস্বরূপ। মায়ান পুরুষরাও মহিলারাদের মত চুল লম্বা রাখতে পছন্দ করত। “কুয়েৎজাল পালক” নামক একটি বস্তু মায়াদের ধর্মীয় পোশাকে ব্যবহার করা হতো। জেড ও সামুদ্রিক খোল তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও যুদ্ধে শিঙ্গা হিসেবে ব্যবহার করত। ভুট্টা পচিয়ে মদ তৈরি করত।
বর্ষপঞ্জিকা :
অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে মায়া সভ্যতা ছিলো তুলনামূলকভাবে বেশ উন্নত। প্রি ক্লাসিক যুগে তারা উন্নতির চরম শিখিরে পৌঁছে ছিল। মায়ানরা জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলো। ৩৬৫দিনকে কেন্দ্র করে একটি জটিল বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করে তারা। আর “২০” সংখ্যাটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে এক জটিল ব্যবস্থা। যেখানে “০” ছিলো তাদের নিজস্ব প্রতীক। ৩৬০ দিনকে এক বছর গণনা করা হতো এবং বাকি ৫ দিনকে তারা অমঙ্গলজনক হিসেবে বিবেচনা করতো। এটি Wayeb’ নামে পরিচিত। মায়া ক্যালেন্ডার অনু্যায়ী ২০১২সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।
মায়ানদের নিয়ে কিছু অদ্ভুত তথ্য :
১.মায়ান অভিজাত নারীরা দাঁতে বিন্দু এঁকে নকশা করতেন।
২.মায়ানরা বন্দী অথবা দাসদের মেরে ফেলার আগে গায়ে নীল রঙ করত।
৩.তাদের দীর্ঘতম ক্যালেন্ডারটি ছিল ২,৮৮০,০০০ দিনের যা শেষ হয় ২০১২ সালে।
৪.মায়ান সংস্কৃতি ও ভাষা মেক্সিকোর অনেক এলাকায় ও গুয়েতেমালায় প্রচলিত আছে।
৫.মায়া পুরাণ অনুসারে হুনাহপু এবং এক্সবালাংখুয়ে নামক দুই মায়া দেবতা নরকের দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যায়।
৬.মায়াদের মতে ভুট্টা ভগবানের সৃষ্টি নয়,মানুষই নাকি ভুট্টার জন্ম দিয়েছে।
৭.মায়ান সমাজে অনেক সময় শাস্তিস্বরূপ বন্দীর শরীরের চামড়া তুলে ফেলা হতো এবং মায়ানদের ধর্মযাজক সেই চামড়া পরে নৃত্য করত
৮.তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্য অন্যতম ছিলো কোকো,লবণ, সমুদ্রখোসা,পাথরবিশেষ এবং কাঁচের মতো দেখতে একজাতীয় আগ্নেয়শিলা।
৯. আধুনিক সাল অনুযায়ী ৩১১৪ খ্রিষ্টপূর্ব মায়াদের উৎপত্তি হয়েছে বলে তারা নিজেরা মনে করেন।
১০.মায়ারা বিশ্বাস করেন যাদেরকে নরবলি দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র তারাই স্বর্গে যাবে।
রেফারেন্স: itibritto , bigganprojukti
আপনার মতামত লিখুন :
