
কপোল শব্দটি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই রয়েছে।
ইংরেজি উচ্চারণ অবশ্য কিছুটা আলাদা:—- কাপল kuh-pl অর্থ যুগল, দম্পতি। যেমন, A couple of people came to see me yesterday. They are a happy couple.
বাংলা অর্থ গাল, গন্ডদেশ– সংক্ষেপে গণ্ড। শুধু মানুষের গণ্ডে নয়, রবি ঠাকুর কল্পনার চোখে কালের গণ্ডেও তাজমহলকে তিল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। “কালের কপোল তলে এক বিন্দু জল”।
বছর পাঁচেক আগে কালের কন্ঠ পত্রিকায় সুলেখক মোফাজ্জল করিম কপোল এবং কপালের অর্থ এবং বানান বিভ্রাট নিয়ে একটা রসালো গল্প লিখেছিলেন। গল্পটা শোনা যাক।
পঞ্চাশের দশকের শুরুতে স্কুলে পড়ার সময় শোনা। গ্রীষ্মের এক ঝিমধরা দুপুরে গ্রামের পাঠশালায় ছেলেরা সুর করে কবিতা মুখস্থ করছে, ‘কপোল ভাসিয়া গেল নয়নের জলে’, আর গুরুমহাশয় নিজ আসনে বসে অর্ধনিমীলিত নেত্রে দিবানিদ্রা উপভোগ করার প্রয়াস পাচ্ছেন।
এমন সময় হঠাৎ শিক্ষার্থীদের কলরব থেমে গেল। একজন পড়ুয়াকে বলতে শোনা গেল, পণ্ডিতমশায়, কপোল অর্থ কী? শুনে, শিক্ষক মহোদয়ের চটকা ভেঙে গেল। কারণ এমন বিদঘুটে শব্দ তিনি জীবনে শোনেননি। মনে মনে বললেন, মর জ্বালা, কপোল? সেটা আবার কী?
তিনি প্রশ্নকর্তা ছাত্রটিকে বললেন, বইটি নিয়ে আয় তো মানকে, দেখি কী লিখেছে। তিনি দেখলেন, কপোলই লেখা আছে বটে। কিন্তু কপোল বলে কোনো শব্দ তিনি কস্মিনকালেও শুনেছেন বলে মনে পড়ল না। হঠাৎ কী মনে হওয়ায় তাঁর চোখেমুখে খুশির ঝিলিক খেলে গেল। তিনি বললেন, আরে, শব্দটা তো ভুল ছাপা হয়েছে রে। ওটা কপোল নয়, ওটা হবে কপাল। কপোল বলে আবার কোনো শব্দ আছে নাকি, এ্যাঁ? নে, পড়, কপাল ভাসিয়া গেল নয়নের জলে।
ছেলেরা এবার ধুয়া ধরল : কপাল ভাসিয়া গেল নয়নের জলে, আর তাদের গুরুমহাশয় আবার দিবানিদ্রায় নিমগ্ন হওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত হলেন।
কিন্তু সেদিন যেন ওই দুষ্টুগুলো ষড়যন্ত্র করে এসেছিল, কিছুতেই তাঁকে ঘুমুতে দেবে না। ওই মানকে ছোঁড়াটি সবাইকে চুপ করতে বলে আবার শিক্ষক মহোদয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করল, মহাশয়, নয়নের জল, মানে চোখের জল তো নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে, ওতে কপাল ভেসে যাবে কী করে, কপাল তো আছে চোখের ওপরে।
এবার ভারি ফাঁপরে পড়লেন পণ্ডিতমহাশয়। তাই তো, নয়নের জল কপাল ভাসায় কী করে। এবার বইটি হাতে নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু করলেন তিনি। তারপর হঠাৎ ‘ইউরেকা’ ধ্বনি তোলার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, ও রে, এখানে তো দেখছি একটা লাইনই বাদ পড়ে গেছে। ছাপাখানার ভূতগুলোর কী যে কাণ্ড। ‘কপাল ভাসিয়া গেল’ লাইনটার আগে যে লাইনটা বাদ পড়েছে তা হবে, ‘দুই ঠ্যাং বাঁধা ছিল কদম্বেরই ডালে’। তাহলে কী দাঁড়াল? ‘দুই ঠ্যাং বাঁধা ছিল কদম্বেরই ডালে/কপাল ভাসিয়া গেল নয়নের জলে’।
এরপর মানকে বা অন্য ছেলেদের মনে আর কোনো সংশয় রইল না, তারা তারস্বরে চিৎকার দিয়ে মুখস্থ করতে লাগল ‘দুই ঠ্যাং বাঁধা ছিল …’। আর শিক্ষক মহোদয় সুখে দিবানিদ্রা যেতে লাগলেন।