একদিন তরুণ টমাস আলভা এডিসন স্কুল থেকে ফিরে তাঁর মায়ের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”মা, আমার স্কুলের স্যার এই চিঠিটা দিয়ে বলেছেন এটা যেন শুধু তোমার হাতেই দেই।”
খামটি খুলে চিঠিটার উপর চোখ বুলিয়ে মায়ের দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। চিঠিতে লেখা বার্তা উপেক্ষা করে ছেলেকে নিজের মত করে পড়ে শোনালেন। “আপনার পুত্রধন একটা জিনিয়াস। তাকে শিক্ষা দেওয়ার মত ভালো কোনো শিক্ষক আমাদের ইস্কুলে নেই। তাকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেন।”
চিঠিতে লেখা মায়ের কাল্পনিক কথাগুলো শুনে এডিসনের মন খুশিতে ভরে গেল। তিনি সাফল্যের হাতছানি দেখতে পেয়ে নতুনভাবে উজ্জীবিত হলেন এবং দ্বিগুন উৎসাহে মায়ের কাছে লেখাপড়া শিখতে লেগে গেলেন। প্রাথমিক স্তরে মায়ের কাছে শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণা তার জীবন সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত হতে থাকে।
যথাসময়ে তিনি সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যান। একের পর এক আবিষ্কারের মাধ্যমে তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি, ফনোগ্রাফ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা, সাউন্ড রেকর্ডিং, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উন্নয়ন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ১,০৯৩ আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব বটে।
অনেকগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তার মায়ের মৃত্যুর পর ঘরের জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে এডিসন আবিষ্কার করেন স্কুল থেকে তাঁর মায়ের কাছে লেখা সেই বিখ্যাত চিঠিটা।
কিন্তু একি! তার মা যে উদ্দীপনামূলক কথা চিঠিতে লেখা ছিল বলে তাকে পড়ে শুনিয়েছিলেন, সে চিঠির ভাষা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন,”আপনার পুত্র মানসিকভাবে অপরিপক্ক। তাকে আমাদের স্কুলে রাখা সম্ভব নয়। তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হল।”
চিঠির হৃদয়বিদারক হতাশাব্যঞ্জক কথাগুলো চেপে গিয়ে তিনি তার পুত্রকে আশার বাণীতে উজ্জীবিত করে তোলেন। তার সাহসিকতা এবং মানসিক দৃঢ়তা এডিসনের সাফল্যের পথ রচনা করে দেয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, চিঠির চরম নেতিবাচক ভাষা পড়ে শোনালে এডিসন হতাশায় ভেঙ্গে পড়তেন। হয়তো তার পক্ষে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো সম্ভব হতো না।
গল্পটার মরাল: কারো হতাশাব্যঞ্জক কথা শুনে নিজের সংকল্প থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়।
দ্বিতীয়তঃ, সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে গতানুগতিক স্কুল, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং সেন্টারের উপর ছেড়ে না দিয়ে পিতা-মাতার উচিত যথাসম্ভব নিজেরাই তাদের বিদ্যা অর্জনের আকাঙ্ক্ষার পরিচর্যা করা।
স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কতটুকুই বা বাচ্চাদের জ্ঞান ভান্ডার পূর্ণ করা যায়? সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের একটা বিখ্যাত উক্তি: I didn’t let the school interfere with my education. স্কুলের পড়াশোনা আমার জ্ঞান অর্জনের পথে অন্তরায় হতে দেই নাই।
পৃথিবীর অন্যতম সেরা বৈজ্ঞানিক নিউটন তাঁর বিখ্যাত সূত্রগুলো প্রণয়ন করেন বাড়িতে বসে যখন প্লেগ মহামারীর কারণে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে দীর্ঘ এক বছর নাগাদ লকডাউনে কাটাতে হয়। শিক্ষকদের গৎবাঁধা লেকচার, পরীক্ষার চাপ না থাকায় তাঁর নিজস্ব মেধা পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত করার সুযোগ পান।
