পানির উপর হাঁটতে না পারার কারণ মানুষের দেহের ওজন এত ভারী যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পানির surface tension উপেক্ষা করে নিচে টেনে নিয়ে যায়। এ কারণে নৌকা বা লঞ্চ ডুবি বহু প্যাসেঞ্জারদের সলিল সমাধি ঘটে।
তাই বলে পানিতে ডুবে মরলে ছোট কিংবা টাইটানিকের মত বড় নৌযান ডুবে গেলে মধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর দোষ চাপিয়ে স্বস্তি লাভ করার অবকাশ নেই। মধ্যাকর্ষণ শক্তি এক মিনিটের জন্য উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষজন, পশুপাখি, নদীর পানি, সমুদ্রের জল, আমাদের অতি পরিচিত চাঁদ মামা মহাশূন্যের দিকে ছুটে যেত। কে জানে কোথায় যেয়ে থামত?
পানির suface tension কে বাংলায় বলা যায় পানির পৃষ্ঠটান। পানিতে আটকে থাকা অণুগুলি অন্যান্য ধরণের অণুর সাথে প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে একত্রে মিলেমিশে কাছাকাছি থাকতে চায়। সুতরাং, যখন মানুষ বা অন্য কিছু পানির পৃষ্ঠটানকে বিচ্ছিন্ন করে, তখন স্থানচ্যুত অণুগুলি তাদের যথাসম্ভব কম শক্তি ব্যয় করে পুনরায় মিলনের প্রত্যাশায় ফিরে আসার চেষ্টা করে।
কিন্তু অনুপ্রবেশকারীর ওজন ভারী হলে নিজেই পানির অণুগুলোকে আরো জোরে আকর্ষণ করে পানির উপরিভাগের দুর্বল বন্ধনকে মাড়িয়ে তলিয়ে যায়।
একই কারণে, হালকা ওজনের ক্ষুদ্র প্রাণীর দেহের ওজনের চাইতে পানির পৃষ্ঠটান বা surface tension যদি বেশি মজবুত হয় তাহলে তারা পানি ও অন্যান্য তরল পদার্থের উপর দিয়ে সহজে হেঁটে যেতে পারে। খালি হাত পায়ে মানুষ তা পারে না।
মানুষের ওজন বেশি হলেও সাঁতার কেটে পানির দুর্বল পৃষ্ঠটানের উপর নির্ভর করে দিব্যি ভেসে চলে যেতে পারে। লাইফবয়ে বাতাস ভরে জলের উপর শরীরের ওজনের চাপ কমিয়ে ভেসে থাকে। কৌশলের সাথে ঢিল ছুড়লে পানির উপর দিয়ে অনেক দুব পর্যন্ত লাফিয়ে লাফিয়ে অতিক্রম করে পরিশেষে চলার গতি হ্রাস পেলে পানিতে ডুবে যায়। গ্রামে-গঞ্জে বাচ্চাদের এটা মজার খেলা।
কয়েক বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যকার মৃত সাগর বা ডেড সি দেখার সুযোগ হয়েছিল। এপারে জর্ডান ওপরে ইসরায়েলের তটভূমি দেখা যায়। দৃষ্টিসীমার বাইরে কিছু দূরে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের পবিত্র ভূমি জেরুজালেম।
ডেড সীর পানিতে সাঁতার না জানলেও ডুবে যাওয়ার ভয় থাকে না। দেখতে পেলাম মানুষজন দিব্যি হাত পা ছড়িয়ে উপুড় কিংবা চিত হয়ে পানির উপর ভেসে রয়েছে।
জলের বিছানায় দিবা নিদ্রা
ডেড সি তে বাইরে থেকে জর্ডান নদী এবং ছোটখাটো জলের ধারা এসে সঞ্চিত হয়, কিন্তু বেরোবার রাস্তা নেই। বাইরে থেকে আসা পানির সাথে লবণ থাকে। যুগ যুগ ধরে সূর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলেও লবণ থেকে যায়। মাছ কিংবা কোন জলের প্রাণী এত লবণাক্ত পানিতে টিকতে পারে না। সেকারণে এর নাম ডেড সি।
পানি লবণের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পছন্দ করে। সে উদ্দেশ্যে পানির H2O অণুগুলো লবণের অণুগুলোল আশেপাশে ভিড় জমায়। সে কারণে মিঠে পানির তুলনায় লবণাক্ত পানিতে বেশি অনু থাকে। লোহা লক্কড়ের মত ভারি বস্তু না হলে সে ঘন পানির বন্ধন বিছিন্ন করে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ডেড সি’র পানিতে ভেসে পেপার পড়ার মজাই আলাদা
ছবি গুগোলের সৌজন্যে
