October 29, 2025

বিবর্ণ ছাই রঙের পোশাক পরিহিতা এক মহিলা এবং বাড়িতে তৈরি অতি সাধারন মানের স্যুট গায়ে চড়িয়ে তাঁর স্বামী ভীরু পদক্ষেপে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটে চলেছেন।

তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে এসেছেন কিন্তু আগেভাগে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসেন নি। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মত উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের যে‌ কি মর্যাদা তারা হয়তো ধারণা করতে পারেননি।

প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারি তাদের দেখতে পেয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ভেবে বসলেন, এ ধরনের চালচুলোহীন লোকদের হার্ভার্ডে আবার কি কাজ থাকতে পারে? সম্ভবত, তাদের হার্ভার্ডের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করারও যোগ্যতা নেই।

“আমরা প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে চাই” লোকটি মৃদুস্বরে বললেন।

প্রেসিডেন্টের মহিলা সেক্রেটারি তাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে বললেন, “তিনি সারাদিন ব্যস্ত থাকবেন”।
“আমরা অপেক্ষা করব” ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন।

মহিলা সেক্রেটারি কয়েক ঘণ্টা তাদের‌ উপেক্ষা করে চললেন এটা ভেবে যে তারা ধৈর্য হারিয়ে বিরক্ত হয়ে বিদায় নিবেন। কিন্তু তাদের উঠার কোন লক্ষন না দেখে শেষমেষ সাহস করে প্রেসিডেন্টের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করার চিন্তা করলেন।

প্রেসিডেন্টকে বললেন, “আপনি যদি তাদের কয়েক মিনিটের জন্য সময় দেন তা’হলে হয়তো তারা বিদায় নেবেন”। প্রেসিডেন্ট মুখে বিরক্তভাব ফুটিয়ে তুলে দাম্ভিকতার সাথে
দম্পতির দিকে এগিয়ে এলেন।

ভদ্রমহিলা তাঁকে বলেন, “আমাদের একটি ছেলে এক বছর হার্ভার্ডে পড়াশোনা করে গিয়েছে। সে হার্ভার্ডকে ভালবাসত এবং আনন্দের সাথে দিনগুলো কাটিয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রায় এক বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে গিয়েছে। আমার স্বামী এবং আমি তার জন্য এ শিক্ষাঙ্গনে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে চাই”।

প্রেসিডেন্টের কঠিন হৃদয় তাতে সাড়া দিল না। “ম্যাডাম” তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন, “আমরা হার্ভার্ডে পড়তে এসে ইন্তেকাল করা প্রত্যেক ছাত্রের জন্য একটি করে মূর্তি স্থাপন করতে পারি না। এ ধরনের আবদারে সাড়া দিলে ক্যাম্পাসটিকে কবরস্থান বলে মনে হবে”।

” না..না..” ভদ্রমহিলা দ্রুত ব্যাখ্যা করলেন। “আমরা মূর্তি স্থাপন করতে চাই না। আমরা ভেবেছি, হার্ভার্ডে তার মধুর স্মৃতি বজায় রাখতে একটি বিল্ডিং তৈরি করে দিতে চাই”।

প্রেসিডেন্ট‌ অবাক বিস্ময় চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মহিলার পোশাক এবং পুরুষের স্যুটের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন: “একটি বিল্ডিং? সে সুখেই থাকুন।‌ একটা বিল্ডিং তৈরি করতে কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে আপনাদের কি কোন ধারনা আছে? হার্ভার্ডের দালানকোঠায় সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এক মুহুর্তের জন্য ভদ্রমহিলা চুপ হয়ে গেলেন। আত্মতৃপ্তিতে প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের মুখে খুশির ভাব ফুটে উঠল। ভাবলেন, এবার হয়তো তারা পড়িমরি করে ছুটে পালাবে।

ভদ্রমহিলা তার স্বামীর দিকে ফিরে মৃদু শব্দে বললেন,”ইউনিভার্সিটি চালু করতে কি এত কম টাকা ব্যয় হয়? তাহলে, কেন আমরা নিজেরাই শুরু করি না?” তাঁর স্বামী মাথা নাড়লেন। বিস্ময়ে‌ বিমূড় প্রেসিডেন্টের মুখ শুকিয়ে গেল।

মিস্টার অ্যান্ড মিসেস লেল্যান্ড এবং জেন স্ট্যানফোর্ড উঠে পড়লেন। অল্পদিনের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়ার পাওলো আল্টোতে তাদের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন: স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের‌ সন্তানের স্মৃতি বহন করে‌ অনন্য বিদ্যাপীঠ হিসেবে কয়েক যুগ ধরে জ্ঞানের আলো বিকশিত করে চলেছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এখন পর্যন্ত ৮৩ জন নোবেল বিজয়ী বের হয়ে এসেছেন। ‌

একে আমরা বলতে পারি মধুর প্রতিশোধ। সে সঙ্গে শিক্ষা নিতে পারি বাহ্যিক আবরণ দেখে কারো বিচার করে অহংকারের বশে যেন দুর্ব্যবহার না করি। দাম্ভিকতার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত ভালো বন্ধুবান্ধব, জ্ঞানী লোকজন এবং হৃদয়বান ব্যক্তিবর্গের স্বহৃদয় সাহচর্য থেকে বঞ্চিত থাকি। এজন্য ইংরেজীতে একটা কথা আছে–Don’t judge a book by its cover.

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest