৩০ কোটি বছর আগে সমস্ত মহাদেশগুলো একটিই ভূখণ্ড ছিল। বিজ্ঞানীরা এখন তার নাম রেখেছে Pangaea—প্যাজিয়ো। সে সময় থেকেই মহাদেশগুলো আস্তে আস্তে পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।
সম্মিলিত ভূখন্ড সুপার-কন্টিনেন্ট প্যাজিয়ো ভাঙতে শুরু করলে উত্তর অংশের আমেরিকা এবং ইউরেশিয়া দক্ষিণ অংশের আন্টার্টিকা ভারতীয় উপমহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে দুই দিকে রওনা দেয়। উত্তর অংশের নাম দেয়া হয়েছে লাওরেশিয়া (Laurasia) দক্ষিণ অংশের নাম গন্ডোয়ানাল্যান্ড বা গন্ডোয়ানা। বলা বাহুল্য এ নামগুলো দেয়া হয়েছে ৩০ কোটি বছর পরে যখন মানুষ এ ধরাধামে আবির্ভাব হয়ে অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে।
Pangaea, Gondwanaland, Laurasia and Tethys
ভূ-বিজ্ঞানীরা দূরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে নাম দিয়েছেন আন্তঃমহাদেশীয় প্রবাহ (Inter-continental drift).
গন্ডোয়ানাল্যান্ড
এ থিওরির মূল প্রতিপাদ্য এই যে প্রত্যেকটি মহাদেশ এবং কিছু কিছু ভূখণ্ড আলাদা ভাবে এক একটা প্লেটের উপর ভাসছে। পৃথিবী নামক গ্রহটি সৃষ্টির প্রথম প্রথম পর্যায়ে প্লেটগুলো মিলেমিশে একসঙ্গে থাকলেও যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্কিম অনুযায়ী ৩০ কোটি বছর আগে ধীরে ধীরে আলাদা হতে থাকে।
চিত্রের একটিতে দেখা যাচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগর সংকীর্ণ অবস্থা থেকে দূরে সরে যেতে যেতে এখন কতটা বিস্তৃত হয়েছে।
এ থিওরির স্বপক্ষে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো প্রমাণ দাখিল করেছেন। তার একটি ম্যাপ দেখলেই বোঝা যায়। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল জোড়া দিলে একেবারে ভাঁজে ভাঁজে মিলে যায়।
আমাদের উপমহাদেশ আফ্রিকার মাদাগাস্কার এলাকা থেকে আলাদা হয়ে এশিয়া ভূখণ্ডের সাথে ঠোকাঠুকি লাগিয়ে দেয়। সে ঠেলাঠেলির চোটে জেগে ওঠে হিমালয় পর্বতমালা। এখনো ধাক্কা ধাক্কি পর্ব চলছে, হিমালয় আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে চলেছে। এ কারণে হিমালয়ের পাদদেশের অনেক জনপদে মাসে দুই-চারবার ভূমিকম্প হতে থাকে।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া একেবারে দক্ষিণ দিকে রওনা দিয়ে অনেক দূর সরে যায়। সে মহাদেশে বিচিত্র সব পশু পক্ষী উদ্ভব হতে থাকে, যা অন্য কোন মহাদেশে নাই। এদের মধ্যে অতি পরিচিত ক্যাঙ্গারু এবং কোয়ালা, ওয়ালাবি, প্লাটিপাস বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্লাটিপাসের চামড়ায় খড়কুটো ভরে স্টাফ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে গেলে সেখানকার প্রাণিবিদরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা সত্যি সত্যি কোন প্রাণী নাকি, না আমাদের সাথে কৌতুক করছ? অন্য একটা কিউট প্রাণী কোয়ালা গাছে বাস করে এবং বাছাই করা ইউক্যালিপটাস পাতা খায়। অস্ট্রেলিয়ান এয়ারলাইন্স কোয়লাকে তাদের লোগো হিসাবে ব্যবহার করে।
মানচিত্র: সৌজন্যে গুগল
