October 29, 2025

জনসাধারণ সাধারণত মিন্টূ রোড বলে জানলেও সড়কের আসল নাম মিন্টো রোড। ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল মিন্টোর নামে সড়কটার নাম রাখা হয়েছে। মিন্টোর পোষাকি নাম ছিল Gilbert John Elliot-Murray-Kynynmound। উচ্চারণ করতে দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থা। যার নামে মিন্টো রোড তার সাথে পরিচয় করে দেয়া যাক। 

মিন্টো ১৯০৫ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল এবং ভাইসরয় ছিলেন। তিনি লর্ড কার্জনের স্থলে অভিষিক্ত হন। কার্জন সাহেবের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের নাম রাখা হয়েছে।

মিন্টো এক রাশ সমস্যা নিয়ে ভারতে আসেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গবিভাগ হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গে দারুন আন্দোলন শুরু হয়। ‌ কাগজে সমালোচনা, মাঠে ময়দানে অনলবর্ষী বক্তৃতার পাশাপাশি গোপন সংস্থা গড়ে ওঠে এবং ইংরেজ হত্যা করার জন্য পিস্তল এবং বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। বিশ্বকবি রবি ঠাকুরও বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে গান লিখেন বাংলার মাটি বাংলার জল……. আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…..। বালক ক্ষুদিরাম বোমা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং পরিশেষে ফাঁসি হয়। এমনকি মিন্টো ও তার স্ত্রী আহমেদাবাদে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে তাদের গাড়িবহরে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তারা অল্পের জন্য রক্ষা পান। তখন ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা।

উপায়ন্তর না দেখে ভারত সচিব মর্লি ও মিন্টো যৌথভাবে আইনের পরিবর্তন করেন যার নাম হয় মর্লি- মিন্টো সংস্কার। এ সংস্কারের মাধ্যমে  শাসনববস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের একটুখানি হলেও সুযোগ দেয়া হয়। প্রিভি কাউন্সিল এবং গভর্নর জেনারেলের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে ভারতীয়দের জন্য প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রাখা হয়। তবুও আন্দোলন চলতে থাকে।

 নানাবিধ দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেও আন্দোলন থামানো যাচ্ছিল না। ১৯১০ প্রচুর বদনাম মাথায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করে  দেশে ফিরে যান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন লর্ড হার্ডিঞ্জ। হার্ডডিন্জ নামটা খুব পরিচিত মনে হয়, তাই না? পদ্মা নদীর উপরে যে ব্রিজটা তার নাম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকা আসামসহ পূর্ব বাংলার রাজধানী হয়। সে সময়ে রমনা অঞ্চলে সচিবালয়, আমলাদের জন্য আবাসিক এলাকা ও নতুন রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়।‌ ভিক্টোরিয়া স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী কার্জন হল এবং অন্যান্য অনেক দালানকোঠা নির্মাণ করা হয়। মিন্টো রোড সে সময়ে তৈরি একটি রাস্তা।

বঙ্গভঙ্গ বাতিল করে পূর্ববঙ্গের সার্থ খর্ব করার বিনিময় সান্তনা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ১৯২০ সালে। সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত কার্জন হল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest