
টেলিপ্যাথি বলতে বুঝায়, মস্তিষ্কের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ। মানে এক মস্তিষ্কের সংকেত অন্য মস্তিষ্ক বুঝতে পারা। ব্যাপার টা আসলে অনেক টা নিজের বুঝার বিষয়। এটা নিয়ে আমার জানামতে, অনেক গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু এটা মানুষ কিভাবে নিবে বা এর গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু হবে তার উপর সন্দেহ রয়েছে।টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ কথাটা বহুদিন যাবত শুনে আসছি। বিশ্বাসযোগ্য না হলেও অদৃশ্যলোক থেকে দূর দূরান্তে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনার বার্তা নিয়ে মানুষের কাছে সিগন্যাল পৌঁছে যায় তাতে কোন সন্দেহ নাই।
কয়েক বছর আগে কনসালটেন্সি কাজে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের জেলা চিত্রল গিয়েছিলাম। পর্বত সংকুল লোকালয়। চারদিকে পাহাড় পর্বত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় একটি মাত্র গিরিপথ, লোয়ারি পাস। তাও আবার দশ হাজার ফুট উপরে। বছরের আট নয় মাস বরফে ঢাকা থাকে। লোক চলাচলের উপযোগী থাকে না বললেই চলে।
শীত কালে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হাওয়াই জাহাজে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে বিমান চলাচল বন্ধ থাকে।
ট্যুরিস্টদের জন্য চিত্রল একটি খুব আকর্ষণীয় জায়গা। নানা বর্ণের মানুষ, উচু বরফ ঢাকা পাহাড় পর্বত,উচ্ছল ঝরনার জলধারা, পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠা বিচিত্র সব ঘরবাড়ি, ছোট-বড় উপত্যকা।সব মিলিয়ে গ্রীষ্মকালে যে ঐক্যতান গড়ে উঠে তা উপভোগ করতে দেশী-বিদেশী টুরিস্ট চিত্রলে ভিড় জমায়। সে কারণে চিত্রল শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল।
তার একটি, মাউন্টেন ইন হোটেলে সপ্তাহ তিনেকের জন্য অবস্থান করছিলাম। শীত আসছে আসছে করছে, সে সাথে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম মাঝারি সাইজের হোটেল মাউন্টেন ইন এ আমিই একমাত্র অতিথি। অন্য যারা ছিল তারা লাস্ট ফ্লাইটে চলে গেছে। ভূতের ভয় আমার নাই কিন্তু একটু যে ভয় করছিল না তা দিব্যি দিয়ে বলতে পারব না।
হোটেলের লোকজন খুব অতিথি পরায়ন। খাতির-যত্নে আন্তরিক। আমি একমাত্র গেস্ট, তাই আমার প্রতি যত্নআত্তি আরো বেড়ে গেল। উত্তম মুরগি মোসাল্লাম তন্দুরি রুটি এ সব আহারাদি সাপ্লাই দিতে কার্পণ্য করত না।
তবুও, রাত্রে মনটা খারাপ হয়ে গেল। চারিদিকে সুনসান, একজন গেস্টও নাই। রাত্রে ঘুমিয়ে আছি। কত রাত্রি হয়েছে মনে নাই। কি যেন একটি স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তেমন কিছু মনে করতে পারছিলাম না। অসমাপ্ত স্বপ্নের মাঝেই হঠাৎ লাফ দিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম আমি নিজেকে স্পষ্ট বলতে শুনলাম, “লিলির কি হলো?”
লিলি আমার বোনের নাম। সপ্তাহখানেক পরে বাড়ি ফিরে এসে জানতে পারলাম সপ্তাহখানেক আগে সে মারা গেছে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে আমি দুশ্চিন্তা করব বলে তারা আমাকে খবরটা জানায়নি। দিনক্ষণ ঘন্টা মিনিট মেলাবর চেষ্টা করিনি তবে আমার বিশ্বাস, তার শেষ নিঃশ্বাস এবং আমার ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে ওঠার মধ্যে কোন অদৃশ্য শক্তি সেতু রচনা করে দিয়েছিল।
বিদেশে যাওয়ার আগে তাকে সুস্থ দেখে গিয়েছিলাম। স্বপ্নের মাঝে “লিলির কি হলো” বলে লাফিয়ে ওঠার কোনো কারণ ছিল না। দুনিয়াতে অনেক রহস্যই রয়ে গেছে তা আমাদের বোধের অতীত। এ কারণে ইংরেজ কবি শেক্সপীয়ার হ্যামলেটের মুখে ডায়ালগ চড়িয়েছিলেন, There are more things in heaven and earth Horatio, Than are dreamt of in your philosophy.