
প্রাইভেট টিউটর রেখে বাচ্চাদের পন্ডিত বানানোর চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যবহার করে পড়াশোনা এবং হোমওয়ার্ক করতে উৎসাহী করা উত্তম। বেশির ভাগ গৃহশিক্ষক আন্তরিক থাকেন না; তাঁদের দৃষ্টি থাকে ঘড়ির কাঁটা এবং মাসান্তে কিছু অর্থ সমাগমের দিকে।
একেবারে ছোট বাচ্চাদের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা বাড়তি সাহায্যের প্রয়োজন হয়। অভিভাবকরা ধৈর্য ধরে বাচ্চাদের এ কঠিন স্তরটি পার করতে সাহায্য করতে পারেন। উৎসাহ ব্যঞ্জক প্রশংসা এবং মাঝে মাঝে ছোটখাটো গিফট যেমন আইসক্রিম, চকলেট কিংবা বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তার আগ্রহ উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।
প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে ভালো একটা স্কুলে পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ হয় না। স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিভা বিকাশের জন্য খুব একটা সহায়ক নয়। এ কারণে আমেরিকার সবচেয়ে প্রতিভাবান সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বলে গেছেন, I didn’t let schooling interfere with my education– স্কুলের পড়াশোনা আমাকে (প্রকৃত) শিক্ষার্জনের জন্য বাধাগ্রস্ত করতে দেইনি।
আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন নিজস্ব চিন্তা ভাবনার জগতকে প্রসারিত করার জন্য চেষ্টা করবেন। হোমওয়ার্ক করে শিক্ষকদের good, excellent মন্তব্য দেখে পুলক অনুভব করা ঠিক নয়। তাকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গল্প কবিতা পড়তে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও তা চর্চা এবং লেখার জন্য উৎসাহ দিয়ে সৃজনশীল জগতের দ্বার খুলে দিতে পারেন। কিছুদিন পর দেখবেন, সে কারো সাহায্য ছাড়াই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
তুমি বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, পাইলট হবে, ক্লাসে ফর্স্ট হতে হবে এসব টার্গেট নিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করে ফেলবেন না। লেখাপড়া করে যে গাড়ি, ঘোড়া, চড়ে সে এ মন্ত্রটা বারবার শুনিয়ে জ্ঞান অর্জনের চেয়ে বৈষয়িক অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা ঠিক না। এতে শুধু জ্ঞান অর্জনই ব্যাহত হয় না, লেখাপড়া শিখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমানুষ হয়।
আপনার জীবনের নিজস্ব ব্যর্থতা পূরণের জন্য বাচ্চাকে একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবেন না। যেদিকে তার ঝোঁক বা aptitude তা যথাসম্ভব বিকশিত করার জন্য উৎসাহিত করবেন।
আমাদের দেশে এখন ইংরেজি শিক্ষার জন্য ধুম পড়ে গেছে। বেশির ভাগই নিম্ন মানের, খরচাপাতি বেশি। বাণিজ্যেই প্রধান উদ্দেশ্য। যাকে তাকে ধরে অল্প বেতনের শিক্ষাদানে লাগিয়ে দেয়। বিদেশি কালচার, ইতিহাস ভূগোল, ধর্মীয় বিশ্বাস পড়তে পড়তে সাধারণ জন স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
নিজেদের মধ্যে তারা কথাবার্তায় কিছু ইংরেজী শব্দ ঢুকিয়ে দিলে গার্জেনরা খুশি। ইংরেজি ভাষা নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে তারা প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। সর্বোপরি তাদের যখন বাড়িতে মা বাবার আদর, ভাই বোনের সাথে পুতুল খেলার বয়স তখন তিন বছর বয়সে ইংরেজি নামধারী স্কুলে অনাবশ্যক প্লে গ্রুপ, কেজি-মেজি ক্লাসে পড়াশোনার জন্য একগাদা বইপত্র চাপিয়ে স্কুলে পঠিয়ে শৈশবের অনাবিল আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করা নিষ্ঠুরতা বৈকি।