এক আমেরিকানের সাথে ইংরেজের বিতর্ক চলছিল, Elevator (এলিভেটর) ও lift (লিফট) এ দুটো শব্দের মধ্যে কোনটা সঠিক। আমেরিকানের দাবি এলিভেটর তারাই আবিষ্কার করেছিল কাজেই শব্দটি সঠিক। ইংরেজ বলল, ইংরেজি ভাষাটা কিন্তু আমরাই আবিষ্কার করেছিলাম।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে যেমন নদীয়া শান্তিপুরের ভাষাকে মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়, ব্রিটিশ ইংরেজি সে ভাষার স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে, খর্ব শক্তির ব্রিটেনকে এখন কেউ মুরব্বি বলে মানতে চায় না। আমেরিকা তো নয়ই।
ইংল্যান্ডের ভাষাকে বলে কুইন্স ইংলিশ। অবশ্য, সবাই যে কুইন্স ইংলিশ ব্যবহার করে তা নয়। ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের জনপদে ইংরেজি ভাষা আলাদা লেবাস পরে রয়েছে। সেখানকার কোন কোন অঞ্চলে লোকজন বলে, We eat tea. খোদ লন্ডনের পূর্বাংশে বিচিত্র উচ্চারণ ও স্লান্গ ব্যবহার করে যে ভাষায় কথা বলে তার নাম Cockney English. অড্রে হেপবার্ন এবং রেক্স হ্যারিসন অভিনীত অনবদ্য এবং আমার সব চাইতে পছন্দের My fair lady ছায়াছবিতে সে ভাষার পরিচয় পাওয়া যায়।
আটলান্টিকের পূর্ব প্রান্তে ইংরেজরা বলে গাড়ির বনেট, পশ্চিম প্রান্তে আমেরিকানরা বলে গাড়ির হুড।
আমেরিকায় কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়াকে বলে vacation, ব্রিটিশরা holiday. আমেরিকানরাও বলে holiday কিন্তু তা বিশেষ বিশেষ দিনের জন্য যেমন স্বাধীনতা দিবস ও ক্রিসমাস।
আমেরিকানরা বাস করে অ্যাপার্টমেন্টে, ব্রিটিশরা ফ্ল্যাটে।
এভাবে আরো কয়েকশো শব্দের পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, America and Britain are two countries divided by a common language.
ব্রিটিশ ও আমেরিকান ইংরেজি ভাষায় পার্থক্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
১। শুনতে অবাক লাগলেও আমরিকানরা যে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে তা বিলেতের ভাষার চেয়ে পুরনো। কলোনি স্থাপনের শুরুতে ইংল্যান্ডের যারা সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল তারা নিজ দেশ থেকে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। সে ভাষাকে বলা হয় rhotic speech যাতে ইংরেজী অক্ষর r পরিপূর্ণ ভাবে উচ্চারণ করা হয়, যেমন large ও park শব্দ উচ্চারণ করতে r অক্ষরটি কঠিন বা জোর দিয়ে উচ্চারণ করতে হয়।
আমেরিকানরা ইংল্যান্ড থেকে সাথে করে আনা সনাতন rhotic speech ধরে রেখেছে কিন্তু ইত্যবসরে ব্রিটেনে ইংরেজি ভাষা কিছুটা মেরামত করা হয়েছিলো। আপামর জনসাধারনের থেকে ভিন্ন পরিমণ্ডল গড়ে তোলার জন্য দক্ষিণ ইংল্যান্ডের সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর লোকজন r অক্ষরটি অতি কোমল ভাবে উচ্চারণ করে কিংবা একেবারেই আমলে আনে না। যেমন, rhotic ভাষায় সাধারন জনগন winter উচ্চারণ করে winterr কিন্তু উচ্চবিত্তের জনগণের non-rhotic সংস্করণে উচ্চারণ করে win-tuh. একইভাবে, Large শব্দের r উচ্চারণ করে অত্যন্ত কোমল ভাবে। ধনী গরিবের মধ্যে কড়ি ও কোমলের লুকোচুরি।
Non-rhotic ভাষায় সাধারণত r এর আগের অক্ষরটি vowel থাকলে r উচ্চারণ কোমল অথবা অনুচ্চারিত থেকে যায়। আমেরিকায় যারা শুরুতে কলোনি স্থাপন করেছিল তাদের বেশিরভাগই rhotic গোত্রের। সেখানে সমাজের উঁচু-নিচুর মধ্যে উচ্চারণ ও বানানের পার্থক্য নেই। r অক্ষর তারা পুরোপুরি উচ্চারণ করে এবং জোর দিয়েই করে।
২। ইংরেজি ভাষার তুলনায় ফরাসি ভাষার আভিজাত্য বেশি। পাশাপাশি দেশ বলে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনে ফরাসি ভাষা শেখার হুজুগ পড়ে যায়, আমাদের দেশে যেমন বাচ্চাদের বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষা শেখার ধুম লেগেছে। দুই দেশের মধ্যে চিরকাল রেষারেষি থাকলেও ইংরেজরা ফরাসি ভাষা থেকে ধার-কর্জ করতে দ্বিধা করেনি। অন্য দিকে আটলান্টিক অপর প্রান্তে সুদূর আমেরিকায় যারা বসবাস করত সে পরিবর্তনের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয় নি। এখন দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকলেও বহুকাল যাবৎ আমেরিকার সাথে বৃটেনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। ব্রিটিশরা যদি ডাইনে যেত আমেরিকানরা বাঁদিকের পথ ধরত।
৩। ভাষায় বিভিন্নতার অন্যতম প্রধান কারণ, দু’দেশের পন্ডিতবর্গ ভিন্ন ভাবে অভিধান প্রণয়ন করেছেন। লন্ডনে ভাষার পণ্ডিতেরা দেশের জনগণের ভাষার থেকে শব্দ চয়ন করে অভিধান রচনা করেছিলেন। এখন অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি জনপ্রিয় হলেও অক্সফোর্ডের পন্ডিতেরা সে ডিকশনারি প্রণয়নের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে আমেরিকানরা ইংরেজি ভাষা নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছিল।
আমেরিকার Noah Webster আমেরিকান ইংলিশের অভিধান প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি সহজ সরলভাবে বানান রীতি প্রচলন করেন। ইংরেজি ভাষার অনেক শব্দ থেকে অনাবশ্যক u বিদায় করে দিয়ে বানান লিখলেন colour=color, honour= honor. তার অবশ্য যুক্তি ছিল। ইংরেজি ভাষার উৎস ল্যাটিন ভাষায় এ ধরনের শব্দে u অক্ষরটি নাই। ফরাসিরা একটা বাড়তি u ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইংরেজরা ফরাসিদের নকল করে একই কাজ করেছে। সে কারণে u বাদ দিলে তাদের দোষ দেওয়া যায় না।
আবার, ব্রিটিশদের ভাষায় যেসব শব্দের শেষে ise রয়েছে, উচ্চারণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা পরিবর্তন করে ওয়েবস্টার লিখলেন ize দিয়ে। যেমন, utilise এর পরিবর্তে utilize, patronise এর পরিবর্তে patronize। এদিক দিয়েও আমেরিকানদের যুক্তি খণ্ডন করা যায় না।
৪। কিছু কিছু বাক্যে আমেরিকানরা অযৌক্তিকভাবে শব্দ পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিয়েছে। কোন আমেরিকানদের যদি চিঠি লিখতে বলা হয় তাহলে বলে I’ll write them. ব্রিটিশ ইংরেজি ভাষার I will write to them বাক্যের থেকে to শব্দটি বিদায় করে দেয়। আমেরিকানদের যদি বলা হয় শপিং করতে যাবে নাকি তাহলে বলবে I could. তা শুনে ব্রিটিশরা অবাক হয়ে যায় কারণ তারা বলে, I could go.
৫। ভিন্নতার অন্য আরেকটি কারণ,ব্রিটেন ও আমেরিকানরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দচয়ন করে তাদের নিজ নিজ ভাষা সমৃদ্ধ করেছে। ভিন্ন ভাষাভাষী জনগণের সাথে সংস্পর্শ ফলে ব্রিটেন আমেরিকার দুটি ভাষার মধ্যে পার্থক্য রচিত হয়েছে। যেমন, খাবারের মসলা ধনিয়ার coriander নামটি ফরাসি ভাষা থেকে বৃটেনের ইংরেজি ভাষায় সাদরে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে সে একই মসলার নাম স্প্যানিশ ভাষা থেকে আমেরিকায় এসেছে cilantro রূপ নিয়ে। সেভাবে ব্রিটেনে বেগুনের নাম aubergine এসেছে আরবী ভাষা থেকে।
অন্যদিকে, বেগুনি রং গোল আকৃতির কারণে আমেরিকানরা বলে eggplant, অস্ট্রেলিয়ানরাও বলে eggplant.
আমেরিকার egg plant
উপমহাদেশে বেগুনের একটা আলাদা নাম আছে, brinjal. একই বেগুনের তিনটি নাম।
বাংলাদেশের brinjal
তাহলে, আমরা ইংরেজি ভাষার দুই সংস্করণের মধ্যে কোনটির গলায় বিজয়ের মালা পরাবো? দু’দেশের ভাষাকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা সঠিক হবে বলে মনে করি।
ইংল্যান্ড ও আমেরিকার দু’জন শিক্ষকের মধ্যে আলোচনায় দু’দেশের ভাষার বৈচিত্র সম্পর্কে একটা কৌতুক বলে আলোচনার ইতি টানছি ।
আমেরিকান শিক্ষক বললেন, তোমাদের দেশে কি হোস্টেলে ছাত্র-ছাত্রীদের ডেট অ্যালাও করো? (আমেরিকার date অন্য জিনিস; গার্লফ্রেড বা বয়ফ্রেন্ডকে বোঝায়।)
বিলেতের টিচার কি অত শত বুঝেন?( তিনি জানেন date অর্থ খেজুর।) সরল মনে উত্তর দিলেন, আমরাও অল্পস্বল্প খেতে দেই। বেশি খেলে পেটের সমস্যা হয়।
