
প্রাচীন গ্রিসের মুখ্য দেবতা জিউসের আবাসস্থল অলিম্পিয়ায় তখনকার ধর্মীয় আচরণের অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম অলিম্পিক গেমস শুরু করা হয় খৃষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালের দিকে।
গ্রীক দেবতা জিউস
রোমানদের দেবতা জুপিটারের মত জিউস ছিলেন গ্রীক দেবতাদের নেতা। তাঁর পোর্টফলিও ছিল আকাশ ও জলবায়ু। তিনি আকাশ থেকে বজ্র, বিদ্যুৎ, বৃষ্টি এবং বাতাস পাঠাতেন বলে বলা হত। লোকজন বিশ্বাস করত যে তিনি দেবতা ও মানুষের রক্ষাকর্তা।
জিউস এবং তার ক্যাবিনেটের অন্যান্য দেব দেবীরা বাস করতেন অলিম্পিয়া পর্বতে। দেবতারা ত আর মানুষের সাথে বাস করতে পারেন না, তাই আস্তানা গাড়তেন মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে পর্বত শৃঙ্গে। এদিকে ধর্মগুরুরা তাদের নামে নানা কাহিনী চালু করে দিতেন। তারই ধারাবাহিকতায়, কিংবদন্তি রয়েছে, দেবতা জিউস এবং তার ছেলে হারকিউলিস প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের জনক।
হারকিউলিস তাঁর বারোটি মহাকাব্যিক অভিযান শেষে পিতা জিউসের সম্মানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরী করেন। হারকিউলিস এ অনুষ্ঠানকে অলিম্পিক নাম দেন এবং প্রত্যেক চার বছর পর পর এ গেমস অনুষ্ঠানের প্রচলন করেন।
মূলত প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত। স্মরণ করা যেতে পারে গ্রীসের পুরো ভূখণ্ড একত্র করে কোন রাজ্য গড়ে ওঠেনি। আলাদা আলাদা নগরে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই নগররাষ্ট্রের ক্রীড়ামোদীরা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত।
বহিঃশত্রুর আক্রমণ হলে নগররাষ্ট্রগুলো একযোগে মোকাবেলা করত। একবার ম্যারাথন যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মিলিত গ্রিক বাহিনীর হাতে পারস্য সাম্রাজ্য পরাজিত হলে এক যোদ্ধা প্রায় ২৬ মাইল দৌড়িয়ে রাজধানী এথেন্সে খবরটা পৌঁছে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার সম্মানার্থে অলিম্পিক গেমসে ম্যারাথন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা চলে আসছে।
সাধারন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে মল্লযুদ্ধ, ঘোড়দৌড়, রথ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। প্রাচীন লিপিতে চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল। লোকোগাথা মতে কোরিবাস নামের ইলিস শহরের এক পাচক অলিম্পিকের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন।
প্রাচীন বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় যে বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও এই প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে তা স্থগিত থাকত। এই যুদ্ধ এবং দ্বন্দ্বে সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়াকে “অলিম্পিকের যুদ্ধবিরতির নীতি” বলা হত।
খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ এবং পঞ্চম শতকে অলিম্পিক গেমস জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। কিন্তু, রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রীসের উপর তাদের প্রভাব বিস্তারের সাথে সাথে প্রতিযোগিতাটি বিলুপ্তির পথে এগোতে থাকে। অলিম্পিক গেমসের কখন ইতি টানা হয় সে সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া না গেলেও মনে করা হয় যে ৩৯৩ খৃষ্টাব্দে এই ক্রীড়াযজ্ঞের সমাপ্তি হয় যখন সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস সমস্ত পৌত্তলিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। আবার কেউ কেউ বলেন দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস যখন ৪২৬ খৃষ্টাব্দে সমস্ত গ্রিক মন্দির ধ্বংশ করার আদেশ দেন তখনই এই গেমসের সমাপ্তি ঘটে।
প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতা
এথেন্সে প্রাচীন অলিম্পিক ভিলেজ
আধুনিক অলিম্পিক
একসময়ের শক্তিশালী গ্রীস উদীয়মান রোমান সাম্রাজ্যের পদানত হয়। রোমানদের হাত থেকে মুক্তির জন্য ১৮২১ সালে গ্রীসে মুক্তিযুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর থেকেই গ্রীকরা এই অলিম্পিক গেমসকে পূনর্জীবিত করার চিন্তাভাবনা করে আসছিল।
অলিম্পিকের এই পূনর্জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন প্যানাজিওটিস সটসস।তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সংবাদপত্রের সম্পাদক। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাস নামের একজন বিত্তশালী ব্যক্তি গ্রীসের রাজা অট্টোকে অলিম্পিক গেমস পুনরায় স্থায়ী ভাবে চালু করার জন্য একটি তহবিল গঠনে সহায়তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৮৫৯ সালে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের পৃষ্ঠপোষকতাতেই অ্যাথেন্সের সিটি স্কোয়ারে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অটোমান সাম্রাজ্য এবং গ্রীসের ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি তার অর্থ দিয়ে একটি স্টেডিয়ামও সংস্কার করে দেন।
ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের সংস্কারকৃত স্টেডিয়ামে ১৮৭০ এবং ১৮৭৫ সালের অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৭০ সালের অলিম্পিকে প্রায় তিরিশ হাজার দর্শক উপস্থিত হয় তবে ১৮৭৫ সালে কত দর্শক হয়েছিল তার প্রামান্য তথ্য পাওয়া যায় না।
১৮৯০ সালের ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির অলিম্পিয়ান গেমস দেখে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা পান। তিনি ব্রুকসের সাথে এমন একটি অলিম্পিক কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেন যা প্রত্যেক চার বছর পর পর বিভিন্ন দেশে অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করবে।
ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁর উদ্যোগে ১৮৯৬ সালে এথেন্সে প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৯৬ সালে প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস
১৮৯৬ সালে এক্স্যন্সসে অনুষ্ঠিত প্রথম অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম।