April 2, 2023

বাংলা ভাষার উৎস উপমহাদেশের মাগধী প্রাকৃত এবং পালি ভাষা। সামগ্রিকভাবে, বৃহত্তর পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা ইন্দো-আর্য (মাগধন) ভাষার পরিবারভুক্ত। মূলত বাংলা ভাষার প্রধান উৎস বাংলা প্রাকৃত এবং পালি ভাষা। পরবর্তীতে আরবি, ফার্সি, তুর্কি, সংস্কৃত, অস্ট্রোএশিয়াটিক ভাষা এবং অন্যান্য ভাষা থেকে কয়েক শতাব্দী যাবত ধার এবং পুনঃধার করে সমৃদ্ধশালী করা হয়েছে।

ইংরেজি ভাষা থেকে যেসব শব্দ মুল অথবা কিছু পরিবর্তন করে বাংলা ভাষায় এসেছে তার একটা তালিকা নিম্নরূপ।

অফিস ofish (office)

জেল jel (jail)

ডাক্তার ḍaktar (doctor)

পুলিশ pulish (police)

ব্যাংক bank (bank)

ভোট bhoṭ (vote)
স্কুল skul (school)

হাসপাতাল haspatal (hospital)

কাপ kap (cup)

গ্লাস glas (glass)

চেয়ার cheyar chair

টেবিল ṭebil (table)

বাক্স baksô (box)

লণ্ঠন lônṭhôn (lantern)

প্লাস্টিক plāsṭik (plastic)

কলেজ Kolēj (college)

আস্তাবল astabol (stable)

সাইকেল caikel (bicycle).

এ শব্দগুলো সরাসরি অথবা সামান্য রদবদল করে বাংলা ভাষায় এমন ভাবে মিশে গেছে তা আলাদা করে ভাবা যায় না। এ শব্দগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকল্প বাংলা শব্দ রয়েছে। তবে দৈনন্দিন কথাবার্তায় লেখাজোকায় সচারাচর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে থাকে।

কলেজ, টেবিল, চেয়ার, প্লাস্টিক, স্কুল, ডাক্তার, সাইকেল, অফিস শব্দগুলো বাংলা ভাষায় স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। এ শব্দগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক ছাড়া অন্য শব্দগুলোর ভালো ভালো বাংলা প্রতিশব্দ আছে। কিন্তু অনেকের কাছে সেগুলো অপরিচিত মনে হয়। কলেজকে মহাবিদ্যালয়, সাইকেলকে দ্বিচক্রপদচালিত যান, ডাক্তারকে চিকিৎসক, অফিসকে দপ্তর কথাবার্তায় ব্যবহার করলে বেখাপ্পা মনে হয়। কখনোবা অবোধ্য। অতিথিকে চেয়ারে বসার আহ্বান জানিয়ে যদি বলেন, ‘কেদারায় বসুন’ তাহলে কেমন শোনাবে? অতিথির মুখে একটু মৃদু হাসি ফুটে উঠবে। ভাষা বিভ্রাট সম্পর্কে একটা কৌতুক শোনা যাক।

এক ছাত্র রিক্সাওয়ালাকে বলল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যেতে।

রিক্সাওয়ালা: বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় তা তো জানি না।

ছাত্র: কেন তুমি ইউনিভার্সিটি চেনো না।

রিক্সাওয়ালা: কেন চিনবো না? বাংলায় ইনভার্সিটি বলেন না কেন? আমি মুখ্য সুখ্য মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় বললে বুঝবো কেমন করে?

নিচের শব্দগুলোর দেখলে আপনার কি মনে হবে না এগুলো আদি অকৃত্রিম বাংলা ভাষা?

আলমারি, ইস্তিরি, ইস্পাত, কামিজ, গামলা, চাবি, জানালা, তামাক, পেরেক, ফিতা, বারান্দা, বালতি, বেহালা, বোতাম, মেজ, সাবান, কেদারা, আতা, আনারস, কপি, পাউরুটি, বাদাম, পেঁপে, পেয়ারা সালাদ, গির্জা, পাদ্রি।

আসলে এ শব্দগুলো পর্তুগিজ ভাষা থেকে এসেছে। এমনকি আমাদের প্রিয় রসগোল্লা বানানোর কলাকৌশল পর্তুগিজরা শিখিয়েছে। বলা হয়ে থাকে পর্তুগীজদের তত্ত্বাবধানে রসগোল্লা বানানো শুরু হয় পটুয়াখালী অঞ্চলে। সেখানকার কারিগরেরা সে কৌশল কলকাতায় নিয়ে যায়। এদিকে উড়িষ্যা দাবি করে রসগোল্লা বানানোর প্রবক্তা তারাই।

ফারসি, আরবি, তুর্কি ভাষা‌ থেকে আগত তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। এমনকি ওলন্দাজ ভাষা থেকে এসেছে ইস্কাপন, রুইতন, হরতন এ ধরণের কয়েকটি শব্দ।

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার এমনিতেই কম, প্রায় এক লাখ এর কাছাকাছি। অন্যদিকে ইংরেজি ভাষার শব্দমালা প্রায় ৫ লক্ষ। হিন্দি, উর্দু, তামিল ভাষায় বাংলা ভাষার তুলনায় বেশি শব্দ রয়েছে।

বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ্ করার জন্য আমাদের আরও নতুন নতুন শব্দ, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে টেকনিক্যাল শব্দগুলো সংযোজন করে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। অন্যথায় সংস্কৃতি এবং ল্যাটিন ভাষার মতো অপ্রচলিত ভাষার তালিকায় চলে যাবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest