November 29, 2023

কিপ্টেমি কলকাতা স্টাইল 

নব্বই দশকে পরিবার-পরিজনসহ ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন সহকর্মী কালীপদ ধর বললেন, “আমার এক শ্যালক কলকাতায় থাকেন। আপনাদের কথা তাকে বলেছি। তারা আপনাদের এক বেলা খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানাতে আগ্রহী।” 

ধর বাবু সুদক্ষ কর্মকর্তা, কাজে-কর্মে চৌকস। অত্যান্ত ভালো মানুষ।  আমার ন্যাওটা। তবে, তার ‘ধর’ পদবি শুনে ছেলে মেয়ে সবাই খুব অবাক। নামের শেষে ধরা-ধরির কথা কেন? শ্যালকের বাসায় খেতে বসে ধরা খেয়ে যাব না তো? 

একজন বলল, শুনেছি কলকাতায় নাকি অতিথিকে জিজ্ঞেস করে, খেয়ে এসেছেন না বাসায় ফিরে খাবেন? অন্য একজন যোগ করল, আমিও শুনেছি, একটা ডিম সেদ্ধ কিংবা কলা পরিবেশন করে বলে, পুরোটাই খেতে হবে কিন্তু।

কলকাতায় পৌঁছে দুই-এক দিন পরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েই ধর বাবুর শ্যালক মহাশয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলাম।

শুরুতেই পরিবেশন করা হলো বেগুন ভাজি ও ডাল। আমাদের এলাকার কালচারে ডাল সাধারণত শেষ আইটেম। ধর বাবুর শ্যালকের বাসায় ধরা খাওয়ার সন্দেহ নতুন করে জেগে উঠলো।   

একটু পরে সব সন্দেহ নিরসন করে একে একে ইলিশ মাছের কারি, মুরগির রোস্ট, আলুর দম ও আরো কয়েক কিসিমের ব্যঞ্জন ডাইনিং টেবিলে জমা হতে লাগলো। আফসোস হলো, বেগুন ভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে পেট ভরে কি বোকামিই না করেছি। 

আইরিশদের কিপ্টেমি

আইরিশদের বদনাম আছে, তারা নাকি হাড় কিপটে। ‌ সৈয়দ মুজতবা আলীর এক গল্প, ইংরেজ, ফরাসি, জার্মান‌ ও আইরিশ পিকনিক করার প্রোগ্রাম বানিয়েছে।

বলা হলো, সবাই সাথে একটা কিছু নিয়ে আসবে। ইংরেজি নিয়ে এলো ‌ বেকন, ফরাসি শ্যাম্পেন, জার্মান সসেজ। আইরিশ নিয়ে এলো তার ভাইকে।

বলা বাহুল্য, এসব রসিকতা চালু করেছে ধূর্ত ইংরেজ। আইরিশদের সাথে তাদের মনোমালিন্য প্রায় আটশ বছর ধরে চলছে।

তা এখনো থামেনি। 

২০০০ সালে একজন আইরিশ কনসালটেন্টের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। তাকে ইংরেজ মনে করে স্মরণ করিয়ে দিলাম যে তারা দুই শ বছর ধরে আমাদের দেশে লুটপাট চালিয়ে ছিল। সে বলল, আমি ইংরেজ নয় আইরিশ‌। তুমি দুইশো বছরের কথা বলছো, ইংরেজরা আমাদের দেশে লুটপাট চালাচ্ছে আট’শ বছর ধরে। 

কিপ্টেমি আমেরিকান স্টাইল

একজন আমেরিকা প্রবাসীর কাছে শোনা, লস অ্যাঞ্জেলেস রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন। তার টেবিলের পাশে মা মেয়ে খেতে এসেছেন। তাদের আলাপে বুঝতে পারলেন, মেয়ে দুরের অন্য এক শহর থেকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।

খাবার অর্ডার দেওয়ার সময় মা ওয়েটারকে বললেন, আমাদের দুজনের বিল আলাদা করে দিবে। ঢাকায় এর একটা বিচিত্র নাম আছে, হিজ হিজ, হুজ হুজ। অর্থাৎ যার যার তার তার। কিন্তু উপমহাদেশে মা-মেয়ের মধ্যে খাবার বিল ভাগাভাগি করার কথা কেউ স্বপ্নেও‌ ভাববে না।

তবে, আমেরিকা বিরাট দেশ, সেখানে উদার লোকেরও অভাব নেই। 

আশির দশকে নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আয়োজিত একটা সেমিনারে অংশ নিতে গেলে একজন  বর্ষিয়ান আমেরিকান কী জানি কোথা থেকে খবর পেয়ে ব্যাংকে এসে আমার সাথে দেখা করার জন্য রিজার্ভ ব্যাংকে এসে হাজির। তিনি ঢাকায় একটি কনসালটেন্সি কাজ এসেছিলেন। তার সাথে ঢাকায় মাত্র দুইবার দেখা হয়েছিল। 

আমি সেমিনারে ব্যস্ত থাকায় তিনি ধৈর্য ধরে ঘন্টাদুয়েক রিজার্ভ ব্যাংকের বাইরে বসে ছিলেন। ‌ সেমিনার শেষে আমাকে এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে প্রচুর আপ্যাযন করেন। বলাবাহুল্য, বিলের অংক ভাগাভাগি করা হয়নি।

কিপ্টেমি বাংলাদেশ স্টাইল

ছোটবেলায় শুনতাম ঘা পাঁচড়া হলে সাতজন কিপটে লোকের নাম লিখে তাবিজে ভরে হাতে পরলে পোকা পালিয়ে যায়, অসুখ সেরে যায়। তারা সবাই গলাকাটা হারে সুদ নিয়ে টাকা ধার দিত। আমাদের দূরে কাছের এলাকায় এদের মধ্যে কিপ্টেমিতে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন বাতেন মোল্লা। রানার্স আপ শ্যামল সাহা। দুজনে গলায় গলায় ভাব।

বাতেন মোল্লা মৃত্যুশয্যায় তার ছেলে কছিম উদ্দিনকে বললেন, তুমি জটিল সমস্যায় পড়লে আমার বন্ধু শ্যামলালের সাথে পরামর্শ করবে।

কয়েক বছর পরে, কোন এক জটিল সমস্যায় পরামর্শের জন্য শ্যামলালের বাসায় হাজির। শ্যামলাল তাকে বৈঠকখানায় বসিয়ে বলল, আলাপ-আলোচনাই যখন করব তাতে আলোর কি দরকার?এই বলে সুইচ টিপে  আলো নিভিয়ে দিলেন। 

আলোচনা শেষে, শ্যামলাল বাতি জ্বালানোর উদ্যোগ নিলে, কছিম উদ্দিন বলল, কাকা একটু অপেক্ষা করুন, আমি লুঙ্গিটা পরে নেই।‌ অন্ধকারে আলোচনা করার জন্য লুঙ্গি পরা আর না পরা একই কথা। এতে লুঙ্গির আয়ু দুই-তিন ঘন্টা বেড়ে যায়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest