November 29, 2023

বাগধারাটির পূর্ণ রূপ ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। গাড়ি-ঘোড়া মূলত বিত্তবান লোকের বাহন। বিত্তহীন লোকের ঘোড়ায় চড়ার বাসনা জাগলে বলা হয় গরিবের ঘোড়া রোগ।

বাংলায় এর সমার্থক বেশ কিছু বাগধারা আছে। একটা, ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার। অন্য একটা, কুব্জের চিত হয়ে শোয়ার আকাঙ্ক্ষা।

গরিবের ঘোড়া রোগ বাগধারাটি খুব সম্ভব ইংরেজি বাগধারা থেকে বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে। “If wishes were horses, beggars would ride”. আদিতে স্কটল্যান্ডের চার শত বছরের পুরনো প্রবাদ। শিশুতোষ ছড়া হিসেবে বাচ্চাদের শেখানো হয়।

অর্থনীতিতেও প্রবাদটি অহরহ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ শুধু কোন পণ্যের চাহিদা থাকলেই হবে না, তা পূরণের জন্য সামর্থ্য বা ক্রয় ক্ষমতা না থাকলে তাকে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে চাহিদা হিসেবে গণ্য করা হয় না। আলাদিনের প্রদীপ ঘসে ইচ্ছামত যা কিছু চেয়ে পাওয়া যায় বটে কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটে না। ‌

কবি-সাহিত্যিকরাও রামধনুর সব রং মিলিয়ে কল্পনার ইচ্ছা ঘুড়ি উড়াবার স্বপ্না এঁকেছেন নানা বর্ণে নানা ঢঙে। বলা বাহুল্য এ সব ইচ্ছে পূরণ হবার নয়। প্রকারান্তে ঘোড়া রোগের কাহিনী।

“ইচ্ছে ছিল নদী হবো
বুকের জমিনে বয়ে যাবো নিরবধি।
ইচ্ছে ছিল বৃষ্টি হবো
ভাসিয়ে দিবো মনের বসত ভিটি সবই।
ইচ্ছে হয়, ইচ্ছেতো হয়ই, ফড়িং হয়ে
নাচি তিড়িং বিড়িং।”

বোনাস হিসাবে ঘোড়া রোগ নিয়ে একটা গল্প শোনা যাক।

এক লোক তাঁর প্রিয় গরুটি এক বন্ধুর জিম্মায় রেখে বিদেশে গিয়েছিলেন। বন্ধু সুযোগ মত গরুটি বিক্রি করে আমোদ প্রমোদ করে টাকাগুলো উড়িয়ে দেন।

বিদেশ থেকে ফিরে গরুটি ফিরিয়ে আনতে গেলে বন্ধু অতীব দুঃখের সাথে জানান, গরুটি মৃত্যুবরণ করেছে। গরু হারা বন্ধু বললেন, জন্ম মৃত্যুর পর তো কারো হাত নেই, তবে প্রিয় গরুর দেহাবশেষটি দেখতে পেলে মনে একটু শান্তি পেতাম।

বন্ধু তাঁকে ভাগাড়ে নিয়ে একটা কংকাল দেখিয়ে বললেন, ঐ তোমার গরুর কংকাল। গরুর মালিক অবাক হয়ে বললেন, এ ত ঘোড়ার কংকাল। ধূর্ত বন্ধুটি বললেন, তাত হবেই, ঘোড়া রোগেই ত’ তোমার গরু মরেছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest