মধ্যাকর্ষণ শক্তি কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলে খুব মজা হত। সুপারম্যান, সুপার গার্ল কিংবা স্পাইডারম্যানের মত লাফ দিয়ে মনের সুখে আকাশে বিচরণ করা যেত।
মজা হতো বটে, কিন্তু পৃথিবী আবার তার বুকে টেনে না আনলে তোমার ঠিকানা হত সীমাহীন আকাশের শূন্যতায়। তোমার কাছে চিঠি লিখতে হত আকাশের ঠিকানায়। ততদিনে অবশ্য অজানা ঠিকানায় পৌঁছে যেতে।
আকাশে উড়ার মোহ কেটে গেলে, রবি ঠাকুরের কবিতার তাল গাছের মত পৃথিবীর কোলে ফিরে আসার জন্য মন চাইবে।
যেই ভাবে মা যে হয় মাটি তার,
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোণটি
তাল গাছ শূন্যে গিয়েছিলে কল্পনার ইচ্ছে মেলে, তাই ফিরে আসতে পেরেছিল ভালোলাগার পৃথিবীতে। গ্রাভিটি না থাকলে তোমার ইচ্ছে পূরণ হতো বটে কিন্তু সুন্দর পৃথিবীতে ফিরে আসার আশা থাকত না।
মধ্যাকর্ষণ থেমে গেলে ঘরের বাইরে যারা থাকবে তারা হারিয়ে যাবে মহাশূন্যে। যারা মজবুত ঘরের ভিতর থাকবে তারা অল্প সময়ের জন্য হলেও নিরাপদ থাকবে। কিন্তু তারপর?
মাটির সাথে শক্তভাবে আটকানো না থাকলে সব কিছুই আকাশের দিকে উড়াল দিবে। প্রথম ধাক্কাতেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র, নদী ও হ্দ মহাশূন্যের পথে রওনা হয়ে যাবে। চাঁদ মামা পৃথিবীর সাথে প্রায় পাঁচশ কোটি বছর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে অসীমের বুকে হারিয়ে যেত। তার স্নিগ্ধ আলো কবি-সাহিত্যিকদের প্রেরণা যোগাতো না।
মধ্যাকর্ষণ না থাকলে মানুষের শরীরের উপর কি প্রভাব পড়ে তার আলামত আমরা জেনে গেছি নভোচারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, কেটে ছিঁড়ে গেলে ক্ষত শুকাতে চায় না, হাড় ক্ষয়ে যায়, পেশিতে শক্তি তেমন থাকে না, ভারসাম্যতা না থাকার কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। কি কারনে জানি না, রক্ত কণিকা হ্রাস পেতে থাকে। রক্তনালী ও হূদযন্ত্রের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এমনকি ভালো করে ঘুম আসে না।
মধ্যাকর্ষণ না থাকলে দৈনন্দিন জীবন দুঃসহ হয়ে যেত। ‘ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে সুখ’ থাকবে না। আমগুলো শূন্যে ভাসতে ভাসতে নাগালের বাইরে চলে যাবে। ট্যাপ ঘুরিয়ে পানি পাওয়া যাবে না। টয়লেটে ফ্লাস টেনে কোন কাজ না হলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে বুঝুন!
রবি ঠাকুরের ‘মরিতে চাহিনা সুন্দর ভুবনের’ ভাগ্যে কি লেখা থাকতো? মধ্যাকর্ষণ না থাকার কারণে পৃথিবী নিজেও টুকরো টুকরো হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত।
মা যেমন তার সন্তানদের বুকে আগলে রাখতে চায়, পৃথিবীও তার সন্তানদের নিজের কোল ছাড়া করতে চায় না। ভাবলে অবাক লাগে, সৃষ্টিকর্তা পরম মমতায় তার সৃষ্ট জীবজন্তুর জন্য সৌরমণ্ডলের তৃতীয় গ্রহটিকে কতভাবেই না বাসযোগ্য করে সাজিয়েছেন। “ফাবি আইয়্যি আলা রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান… তবে তোমার প্রভুর কোন অবদানটি অস্বীকার করবে”.
