October 29, 2025
জুলিয়াস সিজার একটি মাত্র শব্দে সেনা বিদ্রোহ দমন করেন

হ্যাঁ কথাটা সত্য। সিজার বলে কথা! অসম্ভবকে সম্ভব করার জাদুমন্ত্র তাঁর জানা ছিল। সিজার অল্প কথার মানুষ। তিনি ইতোপূর্বে, ৪৭ খ্রিস্টপূর্বে বিনা বাঁধায় আনাতোলিয়া (বর্তমান তুরস্কের অংশ) জয় করে রোমান সিনেটের কাছে লেখা তার একটি পত্রে শুধুমাত্র Veni Vidi Vici —-আসলাম দেখলাম জয় করলাম—-লিখে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে ঐতিহাসিকেরা তাঁর উক্তিটিকে সংক্ষিপ্ততম সুন্দর ব্যঞ্জনাময় উক্তি বলে চিহ্নিত করেছেন। সিজারের একান্ত আপন জন ব্রুটাস সিনেটে তাঁর বুকে ছুরি বসিয়ে দিলে মৃত্যুর আগে যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন, You too Brutus! তাও ইতিহাস-বিখ্যাত একটা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য।

আলোচ্য সেনাবাহিনীর বিদ্রোহও খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ সালের ঘটনা। বিদ্রোহের পূর্বে, রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী সিজারের নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ইউরোপে একের পর এক ভূখণ্ড জয় করে ফেলেছে। এমন কি, ইংলিশ চ্যানেলের ২৬ মাইল জলরাশির বাঁধা পেরিয়ে প্রথমবারের মতো কোন রোমান সম্রাট ব্রিটেন বিজয় করতে সক্ষম হয়েছেন। কোন যুদ্ধেই তাদের পরাজয়ের গ্লানি আস্বাদন করতে হয়নি।

দুর্ধর্ষ রোমান লিজিয়ন (সেনাবাহিনী)

রোমান সেনাবাহিনীর একাংশ

অসংখ্য জয়ের মালা গলায় ঝুলিয়ে তারা ইটালিতে ফিরে এসে বিদ্রোহ করে বসে। তখন অবশ্য জুলিয়াস সিজার তাদের মধ্যে ছিলেন না। ইতোপূর্বে, সিজার যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা আদায়ের লক্ষেই এ বিদ্রোহ। দাবির মধ্যে ছিল, বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাষাবাদের জমি বরাদ্দ এবং ঘনঘন যুদ্ধ অভিযানের অবসান।

সেনাদল একের পর এক যুদ্ধ জয় করেছে। বাকি ছিল আর একটি অভিযান। অভিযান শুরু করার পূর্বেই আগেই তারা মনে করলো, যথেষ্ট হয়েছে, enough is enough. এবার স্থির হয়ে বসে আরাম আয়েশে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সময় এসেছে। ক্রমে ক্রমে তাদের অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।

প্রথম পর্যায়ে তারা মার্চ করে অগ্রসর হতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর, কমান্ডারদের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে আশেপাশের সাধারণ নাগরিকদের উপর চড়াও হয়। যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব, তাদেরই উপর সেনাবাহিনী তান্ডব চালাতে থাকে।

আগেই বলেছি, এ দুর্যোগের মুহূর্তে সিজার তাঁর সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন না। তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে অবকাশ নিয়ে মিসরে তাঁর প্রিয়তমা ক্লিওপেট্রার সাথে প্রমোদতরীতে নীলনদের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন ।

ক্লিওপেট্রা ছিলেন টলেমিয় রাজবংশের সর্বশেষ মিশর সম্রাজ্ঞী। তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত কয়েক শতাব্দীব্যাপী প্রতাপশালী ফারাও রাজবংশের রক্ত। পোশাক-আশাকে সাজসজ্জায় অতুলনীয়া, বাচনভঙ্গিতে জাদুর ছোঁয়া, সৌন্দর্য্য, আভিজাত্য ও ব্যক্তিত্বে রোমান রমণীরা তাঁর তুলনায় একান্তই সাদামাটা। সিজার সে মোহনীয় ক্লিওপেট্রার আমন্ত্রণ কিভাবে উপেক্ষা করবেন?

জুলিয়াস সিজার–ক্লিওপেট্রা কল্পিত ছবি

সিজারের অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনী পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাঁর সহকারী মার্ক এন্টনি। তাঁর পক্ষে বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হচ্ছিল না। জুলিয়াস সিজারের মতো কারিশমা তিনি কোথায় পাবেন?

খবর পেয়ে সিজার তড়িঘড়ি ইটালিতে ফেরত আসেন। কোন বডিগার্ড কিংবা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না করে সরাসরি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলেন। ধীর শান্তভাবে বক্তৃতা মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন।

সবাই ভাবলো, তিনি কতই না তিরস্কার করবেন কিংবা তার প্রতিশ্রুতি পালনের কথা পুনর্ব্যক্ত করবেন। সবাই শান্ত হওয়ার পর তিনি একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করলেন। Citizens– নাগরিকবৃন্দ। একথা বলেই তিনি নিশ্চুপ।‌

প্রথমেই সেনাবাহিনী হতচকিত হয়ে গেল। তারা ভাবলো, তিনি কি শুধু একটা মাত্র শব্দ দিয়ে তাদের অসন্তোষ দূর করবেন?

সিজার কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমনের জন্য অনুগত সেনাবাহিনী নিয়ে আসেন নি, তাদের ভয়-ভীতি দেখাননি। তিরস্কার গালমন্দ করেননি। শুধুমাত্র একটি শব্দে তাঁর মনোভাব ও চিন্তা ভাবনা তুলে ধরেন। তাদের হুশ ফিরল যখন তারা তাদের ভালোবাসার কমান্ডারের মুখনিসৃত এই শব্দটির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারল।

কি ছিল সে শব্দটিতে?

সিজার ছিলেন সেনাবাহিনীর অত্যন্ত জনপ্রিয় কমান্ডার, রোমের সবচেয়ে পুরানো জুলি পরিবারের সদস্য। পরিবারটিকে রোমান সমাজে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখত। সবাই বিশ্বাস করত পরিবারটি দেবী ভেনাসের থেকে উদ্ভূত। দেবীর বংশোদ্ভূত বলে তার মর্যাদা ছিল আলাদা। আজকের দিনে দেবদেবীর থেকে উদ্ভূত বংশ পরিচয় দিলে কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু সে প্রাচীন যুগে বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল ভিন্ন।

জুলিয়াস সিজার ছিলেন সেনাবাহিনীর অত্যন্ত কাছের মানুষ। তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতেন, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন। একাত্মতা প্রকাশের জন্য তাদের সম্বোধন করতেন ‘কমরেড’ বলে।

কমরেড বনাম সিটিজেন

কমরেড না বলে শুধুমাত্র সিটিজেন হিসেবে সম্বোধন করে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, “তোমরা এখন আর আমার কমরেড নয়। তোমরা আমার সেনাবাহিনীর অংশ নও। তোমাদের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমরা সাধারন নাগরিক, ordinary citizens। তোমাদের পরিবর্তে আমি এক নতুন সেনাবাহিনী গড়ে তুলব”। ক্রোধ, অভিমান এবং সাবধান বাণী একটি মাত্র শব্দে প্রকাশ করার দুর্লভ প্রতিভা।

সুযোগ-সুবিধা এবং মর্যাদা হারাবার ভয়ে সে একটা শব্দেরই গুরুত্ব হৃদয়াঙ্গম করে সেনারা অশ্রু বিজড়িত নয়নে সিজারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো। এ পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সিজার তার চাপ অব্যাহত রাখলেন। পরিশেষে অবশ্য তাদের দাবি-দাওয়া পুরণ করেছিলেন।

https://www.lecturesbureau.gr/1/caesar-uttered-one-simple-word-and-the-the-revolt-was-over-in1096/?lang=en

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest