বিদেশে বাস করতে চাইলে ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং নর্ডিক অঞ্চল ভালো। সামাজিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনার কল্যানে সামাজিক নিরাপত্তা জাল বিস্তৃত রয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা উন্নত, শিক্ষার ব্যয় ভার খুব কম কিংবা ফ্রি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাস্তাঘাট ভালো।
তবে, পারিবারিক বন্ধন নেই, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি বলতে গেলে উঠেই গেছে, তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে লিভ টুগেদার। বাল্টিক সাগরের তীরে ন্যুড বিচে পুরুষ মহিলা জন্মদিনের পোশাক পরে শরীরে রোদ লাগায়। পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ নয়। বেশির ভাগ লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না।
এত স্বাধীনতা, প্রাচুর্য সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শিথিল পারিবারিক বন্ধন, বৈরী আবহাওয়া, অবাধ যৌনাচার, জীবনধারণের চ্যালেঞ্জ না থাকার কারণে সুইডিশবাসীরা সুখের স্বর্গে বাস করছে তা বলা যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ ২০১২ সালের পরিসংখ্যান (নিচে লিঙ্ক দেওয়া হল) অনুযায়ী পৃথিবীতে যেসব দেশে সবচাইতে বেশি সুইসাইড করা হয় সে তালিকায় সুইডেনের স্থান তালিকার শীর্ষের দিকে, প্রতি লাখে ১৩.৮, ফিনল্যান্ড যাকে সুখী দেশ বলে মনে করা হয় সেখানে ১১.৮. জার্মানিতে ৯.৬.
তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে ৬.১ প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে ৮.৪, ভারতে ১৩.৮, নেপাল ৯.৬, ভুটানে ১১.৬.
শুধু সুইসাইড নয় খুনখারাবি ধর্ষণ এসব পরিসংখ্যানে আমেরিকায়, ফ্রান্সে ও অনেক উন্নত দেশ বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুন বেশি।
সিরিয়া সংকটের পর মধ্যপ্রাচ্যের রিফিউজিদের ঢল নামার ফলে বিদেশিদের প্রতি তারা মোটেই সদয় নয়। মেয়েরা মাথায় হিজাব পরলে বেশিরভাগ দেশে আইনের লোকের রোষে পড়তে হয়। ফ্রান্সের নর্মান অঞ্চলে তাবূ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউরোপের সর্বত্র ইসলামোফোবিয়া তাদের চিন্তা ভাবনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ফ্রান্সে এখন যে বৈরিতা মূলক অবস্থা চলছে তাতো সবারই জানা আছে।
কাজেই বলছিলাম কি, সুবিধা-অসুবিধা মধ্যেও বাস করার জন্য নিজের দেশ সবচাইতে ভালো । ইউরোপ-আমেরিকায় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে অবজ্ঞা সহ্য করে দু’পয়সা বাড়তি ইনকাম করার লোভে অড জব করে বাস করা অর্থহীন। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে বিদেশে নিজে একা অথবা নিজ পরিবার নিয়ে সুখে থাকা আত্মকেন্দ্রিকতার লক্ষণ।
দেশে ইচ্ছে মতো যাকে তাকে গালি দেয়া যায়। সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হাজার হাজার লাইক পাওয়া যায়। মনগড়া ফতোয়া বয়ান করলে একই ফলাফল। সরকারের বিদেশ নীতি অর্থনীতি কি হওয়া উচিত সে সম্পর্কে মাঠে ময়দানে ফেসবুকে টকশোতে গরম গরম বক্তব্য দেওয়া যায়। করোনার মধ্যে সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে মাস্ক না পরে ঘুরলে কেউ তেমন বাঁধা দেয় না। বিদেশে সোজা জরিমানা অথবা জেলে পাঠিয়ে দেয়।
যাদের দেশে আয় রোজগারের সুযোগ নেই,, ব্যবসা পরিচালনার জন্য মূলধন নেই, চাকরি-বাকরি করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই তাদের কথা আলাদা। তাদের প্রেরিত বিপুল পরিমাণ ফরেন এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাঁদের কাছে আত্মসম্মান বিষয়টি গৌণ, বেঁচে থাকা এবং পরিবার পরিজনের স্বচ্ছলতা তাদের কাছেমূল্যবান। তাঁরা বিদেশ যাইতে চাইলে দোষ দেওয়া যায় না।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_suicide_rate
